অপহরণের শিকার হওয়া চট্টগ্রামের জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলে নোঙর করানোর পরপরই জাহাজে থাকা জলদস্যুদের দলে এসেছে পরিবর্তন। বৃহস্পতিবার (১৪ই মার্চ) দুপুরে সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূলের হোবিও বন্দরে যাওয়ার পর জলদস্যুদের নতুন একটি দল ‘এমভি আবদুল্লাহ’র নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। রাত আটটায় সোমালিয়ার স্থলভাগ থেকে মাত্র সাত নটিক্যাল মাইল দূরে শনাক্ত করা গেছে জাহাজটিকে। ব্রিটিশ মেরিটাইম সিকিউরিটি কোম্পানি জানিয়েছে, জাহাজটিতে বর্তমানে ২০ জন সশস্ত্র সোমালীয় জলদস্যু রয়েছে। জলদস্যুদের আগের পুরো দলটি জাহাজ ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। হালকা অস্ত্র বহনকারী ওই দলে কমপক্ষে ৫০ জন সদস্য ছিল। এদিকে প্রায় ৪০ ঘন্টা পর আবার নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে জাহাজ মালিকপক্ষ।

জলদস্যুদের নতুন দলটিতে অন্তত ২০ জন অস্ত্রধারী রয়েছে। তাদের সকলের হাতেই রয়েছে ভারী অস্ত্র। জলদস্যুদের নতুন দলটি নাবিকদের নিজ নিজ কক্ষে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এর আগের দলটি সব নাবিককে এক কক্ষে জিম্মি করে রেখেছিল।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সোমালিয়া উপকূল থেকে এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান চট্টগ্রামে তার পরিবার ছাড়াও এসআর শিপিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হল।

এ সময় তিনি জানান, জলদস্যুরা এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের কথা মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় জিম্মি নাবিকদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান বলেন, ‘সামনে দিয়ে ওরা অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আশপাশে নেভি জাহাজ দেখলেই মাথায় অস্ত্র ঠেকাচ্ছে। মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ওরা আমাদের জিম্মি করে রাখছে। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিৃ.আমাদের জন্য দোয়া করো।’

এদিকে চট্টগ্রামভিত্তিক কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত মধ্যস্থতাকারী কোনো মাধ্যম খুঁজে পায়নি বলে জানা গেছে। জলদস্যুদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি। জলদস্যুরাও এখন পর্যন্ত জাহাজমালিকের কাছে কোনো বার্তা পাঠায়নি। তবে তারা আশা করছেন, জাহাজটি যেহেতু সোমালিয়ায় নোঙর করেছে, এখন জলদস্যু নেতারা জাহাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে দরকষাকষি শুরু করতে পারে।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে দিয়ে দুবাইয়ের দিকে যাওয়া কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ান দস্যুরা। এতে রয়েছেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। সোমালিয়া উপকূল থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থানরত জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিতে মাত্র ১৫ মিনিট লাগে জলদস্যুদের। মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বন্দরে যাচ্ছিল জাহাজটি। কর্মকর্তারা জানান, দুইদিন আগে রোববারই (১০ মার্চ) দুবাইয়ের দিকে যাওয়া ‘এমভি আবদুল্লাহ’র গতিপথ পরিবর্তন করে সোমালিয়ার দিকে ঘুরিয়ে নেয় জলদস্যুরা।