সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯৪তম জন্মদিন আজ। সাবেক এ সেনাপ্রধান ও পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ-সদস্য ১৯৩০ সালের ২০ মার্চ কুড়িগ্রাম শহরের নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন, যা ‘লাল দালান’ নামে খ্যাত। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে জাতীয় পার্টি দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করবে। এ ছাড়াও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্টপোষক বেগম রওশন এরশাদ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট আলাদাভাবে তার জন্মদিন পালন করবে।
এ উপলক্ষ্যে সকাল ১০টায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি। পার্টির শীর্ষ নেতারা এ সময় তার সঙ্গে থাকবেন। বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবন গুলশানে বেলা ১১টায় কেক কাটা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়াও শ্যামপুর-কদমতলী থানা জাতীয় পার্টি কেক কাটা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। অবশ্য তার আগেই দলের দায়িত্ব ছোট ভাই জিএম কাদেরের হাতে তুলে দেন তিনি। জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি গত বছর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে দেশের আটজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে পল্লীবন্ধু পদক দেয়।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পান ১৯৫২ সালে। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতা গ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮৬ সালে তার প্রতিষ্ঠিত দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন। এরপর গ্রেফতার হয়ে ছয় বছর কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। কারাগারে থাকাকালীন ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে পাঁচটি করে আসনে জয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। জেলে থেকে নির্বাচনে জয়লাভ এবং কোনো নির্বাচনে না হারার রেকর্ডও আছে তার। এরশাদের হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বর্তমান সংসদে প্রধান বিরোধী দল। দশম জাতীয় সংসদেও প্রধান বিরোধী দল ছিল জাতীয় পার্টি।
১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনন্য রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয় দলটি। তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার পরিচালনা করে। এরপর থেকে প্রতিটি সংসদেই প্রতিনিধিত্ব ছিল এ দলের। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দলটি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে জাতীয় পার্টি। বড় ধরনের একাধিক ভাঙনের পরও জাতীয় পার্টি এখন পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রেখেছে।