ফুটফুটে ছেলেটির বয়স মাত্র দুবছর। আক্রান্ত হয়েছে দুরারোগ্য বিরল থেকেও বিরলতম ব্যাধিতে। চীনের ইউনান প্রদেশের কুমিংয়ে জন্ম নেওয়া হাওয়াং ভুগছে মেনকেস সিনড্রোমে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, লাখে একজন আক্রান্ত হয় এ রোগে। জেনেটিক ডিজর্ডার থেকে আক্রান্ত হওয়া মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র বিকাশ না হওয়া এ রোগে আক্রান্তরা বড়জোর তিন বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

স্থানীয়ভাবে এ রোগের ওষুধ দুষ্প্রাপ্য। কিন্তু তার তিরিশ বছর বয়সি বাবা জু ওয়েই নাছোড় বান্দা। ওষুধের সন্ধানে নেমে পড়লেন। এক সময় হাইস্কুল পাশ বাবাই অবতীর্ণ হলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীর ভূমিকায়। চীনের বিস্ময়কর এই বাবাকে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে ‘ফাদার অব দ্য ইয়ার’ বলে সম্মান জানিয়েছে এএফপি।

মেনকেস প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৬২ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ‘এ রোগে আক্রান্তরা খুব অল্প বয়সেই মারা যায়। কোনো রোগী ১০ বছর বেঁচেছিল এমন ঘটনা বিরল।’

মেনকেসের জন্য সহায়ক ওষুধটি চীনে দুষ্প্রাপ্য। তাছাড়া কোভিড-১৯ সময়ে আন্তর্জাতিক সীমানা বন্ধ থাকায় ছেলের জন্য এই ‘অমৃত’ সংগ্রহে অক্ষম ছিলেন জু। এ কারণে নিজেকে বেশ অসহায় মনে হলো তার। খণ্ডকালীন অনলাইন ব্যবসায়ী তিনি। তবু সাহস করে স্থানীয় একটি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা করলেন। কিন্তু তারা যে বিপুল অর্থ দাবি করলেন-সেটা দিতে সক্ষম নন জু। এ অবস্থায় হাল ছেড়ে দিতে নারাজ বাবা। শেষে সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই এ ওষুধ তৈরি করবেন। নেমে পড়লেন মাত্র ২০ হাজার ইউয়ান পুঁজি নিয়ে।

অনলাইনে মেনকেস সিনড্রোম সম্পর্কে পড়াশোনা করলেন। জানতে পারলেন, ছেলের রোগটি কিছুটা হলেও উপশম হবে হিস্টিডিন নামের একটি যৌগের সাহায্যে। তাই ঘরেই রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। জু বলেন, ‘এটা করব কী করব না, তা ভাবার সময় আমার হাতে ছিল না।

আমি জানি, এটা আমাকে করতেই হবে।’ চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম কুনমিং-এর একটি সুউচ্চ ভবনে ল্যাব তৈরি করলেন জু। একমাত্র ওষুধ, যা তার ছেলের দুরারোগ্য রোগের লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি দেবে-তা ছিল একটি জটিল ফার্মাসিউটিক্যাল পদ্ধতি।

জু গবেষণাগারের মাধ্যমে কীভাবে ওষুধ তৈরি করতে হয় তা শিখেছিলেন। তার পরিবার এবং বন্ধুরা তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিল, তাকে বলেছিল এটা অসম্ভব। তা সত্ত্বেও তিনি কপার ক্লোরাইড ডাইহাইড্রেট, হিস্টিডিন, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড এবং পানি সংগ্রহ করে হিস্টিডিন তৈরি শুরু করেন। স্বশিক্ষিত এ রসায়নবিদ অবশেষে সফল হলেন।

তার মোট খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার ইউয়ান। এবার ছেলের জন্য এটি নিরাপদ কিনা, তা পরীক্ষার পালা। প্রথমে একটি খরগোশের ওপর, এরপর নিজের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখলেন সমস্যা নেই-ছেলেকে দেওয়া যেতে পারে।

নিজের তৈরি ওষুধ দিয়ে ছেলের চিকিৎসা শুরু হলো। কয়েক সপ্তাহ পর ছেলের শরীরে উন্নতির ছাপ দেখলেন জু। রক্তের রিপোর্ট দেখে চোখের কোনায় মুক্তো জমাট বাঁধতে শুরু করল। স্বাভাবিক এসেছে। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুমেশা হাসি দিয়ে বললেন, ‘বাবা, আমি সফল হয়েছি।’