‘অদম্য বাংলাদেশ অবাক বিশ্ব, নতুন প্রজন্মের অহংকার’ শ্লোগানে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে গেইলর্ড হোটেলে ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস অব নর্থ আমেরিকা’র (ফোবানা) ৩৫তম সম্মলন শেষ হয়েছে। ফোবানার তিন দিনের মিলনমেলা শেষ হলো ৩৬তম শিকাগো ফোবানায় দেখা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে। এবারের সম্মেলনে ছিল মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস ও স্বাধীনতার ৫০ বছরের আবহ।
নর্থ আমেরিকার প্রবাসীদের সর্ববৃহৎ বাংলাদেশি মিলনমেলা সফল সমাপ্তি ঘটেছে সাত তারকা হোটেল গেইলর্ড পামের ভেন্যু থেকে। ২৬ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর তিন দিনের প্রবাসীদের সম্মেলনটির সফলতা হলো ৩৫টি ফোবানার মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভেন্যু, যা প্রবাসীদের আকৃষ্ট করেছে। কিছু ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের অভাব দৃশ্যমান ছিল।
ফোবানার তিন দিনের কনভেশনের মূল ছিল বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রবাসীদের উপস্থিতি। ৩৪তম ফোবানা না হওয়ার কারণে এবারের ফোবানায় উপস্থিত হয়েছিলেন হাজারো প্রবাসী। প্রায় ৭৫ ধরনের স্টল ছিল। ছিল বিজনেস প্রমোশনের জন্য বিজনেস লাঞ্চ। বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক তৈরিতে বিজনেস লাঞ্চ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আমেরিকান ব্যবসায়ীরা সেমিনারে সাফল্য ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। বিজনেস লাঞ্চ মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ডেভিড মজিনা। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মুক্ত আলোচনায় বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশকে রাইজিং স্টার বলেছিলাম ১২ বছর আগে, যা তখনকার সময়ের জন্য ভবিষ্যত হলেও এখন তা বর্তমান। ঠিক তেমনি ২০৭১ সালে বাংলাদেশ অনেক অনেক দূর যাবে। বিশ্বের অন্যতম একটি উন্নয়নশীল দেশ হবে। যা ভবিষ্যত আপনারা তাই দেখবেন। আমি বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা ঘুরেছি। বাংলাদেশের মানুষের মতো ভালো মানুষ পৃথিবীতে নেই।
ফোবানায় ছিল ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সেবা। তিন দিনের কনস্যুলেট সার্ভিসে প্রবাসীরা উপকৃত হন। ছিল ফেইথ ইন্টারফেইথ ডিসকাশন। ছিল বাচ্চাদের সায়েন্স ফেয়ার ও এরাবিক ক্যালিওগ্রাফি প্রদশর্নসহ বেশ কয়েকটি সেমিনার।
তৃতীয় দিন ২৮ নভেম্বর দুপুর ১টায় ছিল ফোবানার এজিএম ও নির্বাচন। ফোবানার এক্সিকিউটিভ কমিটির নির্বাচনই ছিল ‘টক অব দ্যা হল’। ফোবানার কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন নিয়ে ছিল টান টান উত্তেজনা। পুরো চার ঘণ্টা লাগে বার্ষিক এজিএম ও নির্বাচনে। ভোটাররা শতভাগ ভোট প্রয়োগ করেন। এবারই প্রথম মোবাইলে সবাই ভোট দিয়েছেন। ফোবানার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) রেহান রেজা, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছেন মাসুদ চৌধুরী। তাদের দুজনই একাধিকবার কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফোবানায় কোভিড পরবর্তি প্রবাসীদের মধ্য দীর্ঘদিন পর দেখা সাক্ষাতের সুযোগ হওয়ায় অনেকেই গান, নাচ বাদ দিয়ে নানান আড্ডায় মশগুল ছিলেন। ফোবানায় আকর্ষণীয় ভেন্যু ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই নানান সমস্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। যদিও কনভেনর জি আই রাসেল ও ফোবানা চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী চেষ্টা করেছেন ফোবানাকে সফল করতে।
তিন দিনের ফোবানায় যারা সংগীত পরিবেশন করেন তাদের মধ্যে অন্যতম সাবিনা ইয়াসমিন, রিজিয়া পারভীন, সুমাইয়া বৃষ্টি, লুইপা, তাহসান, মাহবুব ও রবি চৌধুরী। আরও ছিলেন কামরুজ্জামান বকুল, শামিম সিদ্দিকি, শম্পা জামান, এম এ শোয়েব, রোকসানা মির্জা, শশি, রোজি প্রমুখ। বাই এর পরিবেশন, ওয়ার্দার অসাধারণ পরিবেশনা, শতদল, নজরুল ও প্রমিলাসহ প্রায় ১০০টি সেগমেন্ট ছিল।
৩৫তম ফোবানার মিউজিক ছিল অনেক উন্নতমানের। একমাত্র খাবারের অপ্রতুলতাই ভুগিয়েছে নবীন-প্রবীণ সবাইকে। সাত তারকা হোটেলে ফোবানার ট্রাডিশনাল খাবারের ভেন্ডরগুলো অনুপস্থিত ছিল। চা, সিঙ্গারা, চটপটি, ফুচকা, ভাত, চিকেন, বার্গার, পেয়াজু খুঁজেছেন শত-সহস্র প্রবাসী। ৩৫তম ফোবানায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে ম্যারিল্যান্ড, ওয়াশিংটন ও ভার্জিনিয়ার প্রবাসীরা ছাড়াও নিউইর্ক, নিউজার্সি, ফ্লোরিডা, আটলান্টা, টেক্সাস, ডালাস, মিয়ামি, মিশিগানের প্রবাসীরাও উপস্থিত ছিলেন।
ফোবানার মূল হল রুমের পাশের একটি বৃহদাকার হল রুমে ছিল শাড়ি, সেলোয়ার, কামিজ, জুয়েলারি ও পাঞ্জাবির বিশাল সমাহার। প্রায় ৩০টি ভেন্ডার বিশাল পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। ছিল মুক্তধারার স্টল।
৩৫তম ফোবানার হোস্ট কমিটির বিশাল একটি তালিকা ছিল। নানা মাধ্যমে তারা কাজ করেছেন। তবে বেশ কয়েকজন সংগঠক ছিলেন চোখে পড়ার মতো। তারা হলেন- এস কে মিলন, আবু সরকার, হাসনাত সানি, তুশার, আকাশ রেইস, এস বি সুভ্র, ডা. ফাইজুল, হিরন চো, ইনারা ইসলাম, পারভীন পাটওয়ারী, জেবা রাসেল, শাব্বির আহমেদ, আকতার হোসেন, জনি, শামিম চৌ, সাম রিয়াসহ আরও অনেকেই।
পিপল এন টেকের আবু হানিফ রিহার্সেলের জায়গা দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। ফোবানার আইকনসহ নানা স্পন্সর ফোবানার তিন দিনের ইভেন্ট উপভোগ করেন।
তৃতীয় দিন ২৮ নভেম্বর স্থানীয় সময় রাত ১০টায় নব নির্বাচিত ফোবানার কেন্দ্রীয় কমিটি শপথ গ্রহণ করেন। বিদায়ী কনভেরন জি আই রাসেল নতুন কনভেনর মকবুল আলীকে ফ্লাগ হস্তান্তর করেন।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূদ শহিদুল ইসলাম, জর্জিয়া স্টেটের সিনেটর শেখ রহমান, অন্তর শোবিজের স্বপন চৌধুরী, নিউজার্সির প্লেইনসবরো টাউনশিপের কাউন্সিলম্যান মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরান নবী, টাইটেল স্পন্সর নাহিয়ান সকলেই আয়োজকদের প্রশংসা করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানেও পুরোনো বন্ধু আর সহপাঠিদের খুঁজে পেয়েছেন অনেকেই। ফোবানা নানা শহরের প্রবাসীদের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। অনেকের সঙ্গে হতো ২০-২৫ বছর পর দেখা হয়।
ফোবানায় ব্যবসায়ী, শিল্পী, সাংবাদিক, কবি, সংগীত শিল্পী, উদ্যোক্তা, এন্টারপ্রেনার, শিক্ষাবিদ তাদের সমমনা প্রবাসীদের মধ্যে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটাই গত ৩৫ বছর ধরে চলছে। আগামী বছর শিকাগোতে ৩৬তম ফোবানায় দেখা হওয়ার প্রত্যয়ে ৩৫তম ফোবানার পর্দা নামে। ৩৬তম ফোবানার কনভেনর মকবুল আলী সবাইকে আগামী সেপ্টেম্বরে শিকাগোতে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান।