ইথানল, স্পিরিট ও নিম্নমানের রঙ দিয়ে ভেজাল মদ তৈরির পর নামি-দামি ব্র‍্যান্ডের লেবেল লাগিয়ে বোতলজাত করে বিক্রির অভিযোগে উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে রামপুরা রিয়াজবাগ এলাকায় ভেজাল মদের কারখানাটিতে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (উত্তর)। এ সময় তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার (৪ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।

অভিযানে কারখানাটির মালিক আশরাফুজ্জামান ওরফে মোশারফসহ (৩৫) তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি দুই জন হলেন মো. আবুল খায়ের চৌধুরী (৬৯) ও মো. হায়দার ভূঁইয়া (৩৬)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১০ বোতল বিদেশি ব্লাক লেবেল, ৫ বোতল নেমিরফ, ৮ বোতল কেরুস ফাইন ব্রান্ডি, মদ তৈরির উপকরণ ইথানল ২০ লিটার, এসেন্স ৪০০ গ্রাম, চারকল পাউডার ৪৫০ গ্রাম, বোতলজাত করার পাইপ ১টি, বিদেশি মদের লেবেল ৮০টি, মদের কর্ক ৮০টি, খালি বোতল ৩০টি ও একটি স্টিলের চোঙ্গা জব্দ করা হয়েছে।

মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে, একটি চক্র বাজারে নকল মদ সরবরাহ করে মানুষকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে একটি বিশেষ টিম রামপুরা এলাকার রিয়াজবাগে গতকাল অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে কারখানার মালিকসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া অভিযানে বিপুল পরিমাণ ভেজাল মদ তৈরি উপকরণ জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, ইতোপূর্বে ভেজাল মদ পান করে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে ডিএনসি ডিজি ভেজাল মদ প্রতিরোধের নির্দেশনা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় অভিযানটি পরিচালনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ভেজাল মদ তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, বিভিন্ন ভাঙারির দোকান থেকে চক্রটি প্রথমে বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের মদের খালি বোতল সংগ্রহ করত। পরে তারা অবৈধভাবে মদ তৈরি করার স্পিরিট তৈরি করে। এছাড়া মদ তৈরি করার আরও রাসায়নিক উপকরণ সংগ্রহ করে চক্রটি। পরে এমনভবে তারা ভেজাল মদ তৈরি করে বোতলজাত করত যা দেখলে কোনোভাবে মনে হবে না নকল। পরে তারা বাজারে আসল মদ বলে এই ভেজাল মদ বিক্রি করত।

গ্রেপ্তাররা জানায়, গত ছয় মাস ধরে তারা এই ভেজাল মদ তৈরি করে বিক্রি করে আসছিল।

কোনো ওয়ার হাউজগুলো তাদের কাছ থেকে মদ কিনত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, এরা কোনো ওয়ার হাউজের কাছে মদ বিক্রি করত না। তারা খুচরাভাবে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে মদ বিক্রি করত। এছাড়া নতুন বিধিমালা অনুযায়ী বারগুলো বিদেশি মদ আমদানি করতে পারবে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ দেশি ও ৪০ শতাংশ বিদেশি মদ রাখতে পারবে বারগুলো।

ভেজাল মদ মানুষজন কেন কিনছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মদের দাম একেক সময় একেক রকম। ভেজাল মদের তো দামের কোনো সীমা নাই। ভেজাল মদের তৈরি খরচই তো অনেক কম। এছাড়া তারা ভেজাল মদের এমনভাবে বোতলজাত করে যে মানুষ একটা বুঝতে পারে না আসল নাকি নকল। যারা তাদের কাছ থেকে কিনেছে তারা আসল মদ মনে করেই নিয়ে গেছে।

চক্রটি ভেজাল মদ তৈরি করার উপকরণগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করেছে এবং এ ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে নেব। রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করব এই উপকরণগুলো তারা কিভাবে সংগ্রহ করেছে। তথ্য পাওয়ার পর এ বিষয়ে আমরা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেব।