যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার রিপোর্টকে ‘বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ উপস্থাপনের চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশন, এনজিও, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রভৃতির ভিত্তিতে নেওয়া সব তথ্য বস্তুনিষ্ঠভাবে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, ন্যায্যভাবে পর্যালোচনা করে মানবাধিকার রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয়।’

অনেক উৎস থেকে তথ্য নেওয়া হয় বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রিপোর্ট বাস্তবভিত্তিক সামগ্রিক প্রতিবেদন বলেও আমেরিকান কর্মকর্তারা দাবি করেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশের পর বুধবার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা প্রতিবেদনের প্রেক্ষিত সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা বলেন, এই প্রতিবেদনে ২০২১ পঞ্জিকাবর্ষের জন্য ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানবাধিকারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস, নির্বাহী বিভাগ, নাগরিক সংগঠন, শিক্ষাবিদ, অ্যাকটিভিস্ট এবং সব জায়গার মানুষেরা এই দেশভিত্তিক প্রতিবেদনগুলোর তথ্য ব্যবহার করে। মানবাধিকারের উন্নয়নে এবং এর অবমাননা ও লঙ্ঘনের জবাবদিহি করার ক্ষেত্রে এদের সবার ভূমিকা আছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘনকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখতে পারি না। এই ধরনের লঙ্ঘন যে কোনো একক দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাইরেও ক্ষতির কারণ হয়; যে কোনো জায়গার অনিয়ন্ত্রিত লঙ্ঘন সবখানেই বিচারহীনতার রোধে অবদান রাখতে পারে। মানবাধিকারের সাতটি ক্ষেত্রের প্রতি নজর দেওয়া হয়। ১. ব্যক্তির মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা, যা বিচারবহির্ভ‚ত হত্যা, গুম, নির্যাতন ও বিধিবহির্ভূত গ্রেফতারের সঙ্গে সম্পর্কিত; ২. নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা, যা বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন ও বিধিবহির্ভূত গ্রেফতারের সঙ্গে সম্পর্কিত; ৩. রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের স্বাধীনতা; ৪. সরকারের দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাব; ৫. মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি তদন্তের প্রতি সরকারের মনোভাব; ৬. বৈষম্য ও সামাজিক হয়রানি যার মধ্যে রয়েছে নারী, শিশু, যৌন ও লৈঙ্গিক সংখ্যালঘু, জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার; এবং ৭. শ্রমিক অধিকার, যার মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশের অধিকার এবং জোরপূর্বক শ্রম, শিশু শ্রম ও নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্য নিষিদ্ধ করা।

দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন করছে। এই সময়ে গণতন্ত্র, সুশাসন এবং মানবাধিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানবাধিকার প্রতিবেদনে শুধু নেতিবাচক দিক নয়; বরং মানবাধিকার রক্ষায় সরকার যা করছে তারও উল্লে­খ আছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তাদের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করে না কেন- জানতে চাইলে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবাধ গণমাধ্যম রয়েছে। আমরা আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি না। কংগ্রেসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি কড়া নজরদারির মধ্যে রাখে।