গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শ্রীলঙ্কায় চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে প্রথমবারের মতো গুলি চালিয়েছে দেশটির পুলিশ। এতে অন্তত একজন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার কলম্বো পুলিশের একজন মুখপাত্র বিক্ষোভে গুলি চালানোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ এবং বিক্ষোভ সহিংস আকার ধারণ করায় গুলি চালানো হয়েছে।

তেলের তীব্র ঘাটতি এবং উচ্চ মূল্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাজধানী কলম্বো থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরের রামবুক্কানা শহরে সড়ক অবরোধ করে লোকজন বিক্ষোভ করেছেন। জ্বালানির তীব্র ঘাটতির কারণে শ্রীলঙ্কাজুড়ে মঙ্গলবার বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। এ সময় তারা রাজধানীমুখী সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর এবারই প্রথম সবচেয়ে বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে নিত্য-প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্যসামগ্রীর তীব্র সঙ্কট চলছে। আমদানিতে বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় দ্রব্যমূল্য আকাশ ছুয়েছে। উৎপাদনে ভাটা পড়ায় দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্রের বাসিন্দাদের।

মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকায় দেশটিতে হু হু করে বাড়ছে খাদ্য-ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না দেশটি। ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার গণপরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা।

বিদ্যুৎ-খাদ্য-ওষুধ-জ্বালানি সংকটে অতিষ্ঠ শ্রীলঙ্কার জনগণ গত কিছু দিন ধরে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন বং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কলম্বোসহ দেশের সব বড় শহরে আন্দোলন শুরু করেছেন তারা। জনগণের ক্ষোভের মুখে ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য পদত্যাগ করেছেন।

মঙ্গলবার রামবুক্কানার যে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন দেশটির ক্ষুব্ধ জনগণ, সেটি মধ্যাঞ্চলীয় শহর ক্যান্ডিকে রাজধানী কলম্বোর সাথে সংযুক্ত করেছে। শ্রীলঙ্কাজুড়ে জ্বালানি স্টেশনগুলোতে পেট্রোল এবং ডিজেল ফুরিয়ে যাওয়ায় দেশটিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

দেশটির প্রধান খুচরা তেল বিক্রেতা কোম্পানি সিলন পেট্রোলিয়াম করপোরেশ তাদের তেলের দাম ৬৪ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি এবং রেশনিং ব্যবস্থা প্রত্যাহার করেছে।

পেট্রোলের খুচরা বিক্রেতা লঙ্কা আইওসি দেশটির স্থানীয় বাজারের এক তৃতীয়াংশ তেলের সরবরাহকারী। তারাও গতকাল তেলের মূল্য ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে।

আইএমএফের কাছে দ্রুত আর্থিক সহায়তা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দ্রুত আর্থিক সহায়তার আবেদন করেছে শ্রীলঙ্কা এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই আর্থিক সংস্থা সেই আবেদন বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

সোমবার ওয়াশিংটনে শ্রীলঙ্কার নতুন অর্থমন্ত্রী আলি সাবরির নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়েছে আইএমএফ কর্মকর্তাদের। বৈঠকে কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশেষ প্যাকেজ র‌্যাপিড ফিন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্টের (আরএফআই) আওতায় শ্রীলঙ্কাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে আইএমএফ।

কোনো দেশ জরুরিভিত্তিতে আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনবোধ করলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের আরএফআইয়ের জন্য আবেদন করতে পারে। কোনো দেশ বা সংস্থায় জরুরিভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা পাঠানোর জন্যই এই প্যাকেজ চালু করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।

এর আগে শ্রীলঙ্কা সরকার আরএফআই প্রকল্পের আওতায় জরুরি আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছিল, কিন্তু আইএমএফ প্রথমে সেই আবেদন মঞ্জুরে আগ্রহী ছিল না।

লঙ্কান অর্থমন্ত্রীর সহকারী শামির জাভাহির বলেছেন, ওয়াশিংটনের বৈঠকে আইএমএফ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কাকে আরএফআই প্রদানের জন্য ভারত অনুরোধ জানিয়েছে এবং এই অনুরোধের পরই তারা আবেদন বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।