গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে মানুষ অস্থির থাকে। এসময় অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর অনেকটাই ক্লান্ত থাকে।  শিশু, কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সি মানুষ অতিরিক্ত গরমে হাঁপিয়ে উঠেন।  কিছু সাধারণ শারীরিক সমস্যা যেমন- কাশি, জ্বর, হিটস্ট্রোক, এলার্জি, কোস্টকাঠিন্য, পানিশূন্যতা, মাথাব্যাথা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় অনেকেই আক্রান্ত হয়। এছাড়াও পানিবাহিত রোগ যেমন- কলেরা, জন্ডিস, ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিংও হয় অনেকের।

তাই গরমের সময় খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে একটু যত্নবান হওয়া লাগে।  এই ধরনের মৌসুমী অসুস্থতা থেকে দূরে থাকতে সুষম ও সঠিক খাদ্যব্যবস্থা এই সময়ে অনেক জরুরি। চর্বি ও তৈলাক্ত খাবার বাদ দিতে হয়।  সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া উচিত।  যথাসম্ভব রিচ ফুড পরিহার করা উচিত। এই গরমে নিজেকে সুস্থ রাখতে যে ধরনের খাবার খাবেন।

সহজে হজমযোগ্য খাবার: গরমের সময় অতিরিক্ত তেলের খাবার, ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া উচিত নয়। বরং নরম, সুস্বাদু, ঘরে তৈরি খাবার যা সহজে হজম হয় সেগুলো খেতে হবে। পুডিং, সিদ্ধ নুডলস, নরম ভাত, মাছ, মুরগির মাংস, নরম সুজি, ঘরে তৈরি ফলের জুস ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। গরমে শিশুরা প্রচুর ছোটাছুটি ও দৌড়াদৌড়ি করলে অতিরিক্ত শারীরিক শ্রমের পর যে কোনো ভারি খাবার শিশুদের হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। এমনকি বমি বমি ভাবের সৃষ্টি করে। তাই গ্রীষ্মে শিশুদের চিপস, বাদাম, পাপড়, চানাচুর, চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি না খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়।

দুধের বিকল্প খাবার: দুধ শিশুসহ সব বয়সীদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি খাবার, যা ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের বড় একটি উৎস। কিন্তু গরমের সময় শিশুকে জোর করে দুধ খাওয়ালে অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই তা হজমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এতে শিশু অস্বস্তি বোধ করতে পারে। তাই গরমের সময় দুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে জোর না করে ঘরে তৈরি লাচ্ছি, মাঠা, মিল্কশেক ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে।

রুটিন মেনে চলা: গরমের এই সময় সঠিক পুষ্টি ও ক্যালরির চাহিদা বজায় রাখার লক্ষ্যে সঠিক সময় মেনে খেতে হবে। সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সকালের নাশতা খেতে হবে। দুপুর ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে দুপুরের খাবার খেতে হবে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে রাতের খাবারের রুটিন রাখা ভালো। এরপর মধ্যসকাল, বিকাল ও শোয়ার আগে শিশুকে হালকা খাবার, বিশেষ করে তরল খাবার দিতে হবে।

তাজা খাবার: এ সময়  তাজা খাবার খাওয়াতে হবে। কেননা এ সময় ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া গরমে খাবারে দ্রুত পচন ধরে। তাই সতেজ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন, শিশুদের স্কুলের টিফিনে ফল ও সবজির কোনো প্রিপারেশন করা যেতে পারে। কেননা সবজি ও ফল দ্রুত ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে। টিফিন হিসেবে বিস্কুট, ডিম, ডিমের নুডলস ইত্যাদি খেতে পারে।

তাজা মৌসুমি ফল: এই গ্রীষ্মকালে প্রকৃতিতে নানা রকম ফল ও সবজি পাওয়া যায় যা দিয়ে সহজেই শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেটানো যায়। গরমে তরলের চাহিদা ও ভিটামিন মিনারেলের দৈনিক চাহিদা পূরণে ফল দারুণ সাহায্য করে। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ও সংক্রমণের বিরুদ্ধেও ফল অনেক কার্যকর। তাই এ সময় তরমুজ, বাঙ্গি, আম, লিচু ইত্যাদি ফল শিশুদের জন্য বেশ উপকারী।

পর্যাপ্ত তরল দিন : গরমে অনেকের অনেক ঘাম হয়। ফলে শরীরে পানি ও ইলেকট্রোলাইটসের ঘাটতি দেখা দেয়। অনেক শিশুকে ডিহাইড্রেশন ও হিটস্ট্রোক নিয়েও হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখা যায়। তাই শিশু পানি ও তরল খাবার কতটুকু খেল, সে বিষয়টি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। স্কুলে পানি কতটুকু দেয়া হল আর কতটুকু পানি শিশু খেল তা-ও লক্ষ্য করুন। স্কুল ছুটির পর ডাবের পানি, লেবুর পানি, কাঁচা আমের জুস ইত্যাদি খেতে দেওয়া ভালো।