বাংলাদেশের জন্য দিনটা স্বস্তিরই হতে পারতো। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের সেঞ্চুরির কারণে হয়নি সেটি। অভিজ্ঞ ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনটি স্বস্তিতেই কাটালো শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। দিনের নির্ধারিত ৯০ ওভারে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ২৫৮ রান করেছে সফরকারীরা। অপরাজিত কুশল মেন্ডিসের ব্যাট থেকে এসেছে ফিফটি।
লঙ্কানদের চার উইকেট তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশের তিন স্পিনার। তাতে দিনশেষে খুশি বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। তিনি বলেছেন, ‘টেস্টের প্রথম দিন হিসেবে যেভাবে তারা বল করেছে আমি তাতে খুশি। বিশেষত সাকিব ও তাইজুল, নাঈম হাসান দুই উইকেট নিয়েছে। যেমনটা বলেছি, তাদের পারফরম্যান্সে আমি খুব খুশি। ’
প্রায় দেড় বছর পর টেস্ট খেলতে নেমেছেন স্পিনার নাঈম হাসান। ফিরেই প্রথম ওভারে উইকেট তুলে নেন তিনি, পরে পেয়েছেন আরও এক উইকেট। লম্বা সময় ক্রিকেটের বাইরে থাকায় নাঈমের দরকার ছিল আত্মবিশ্বাস, যেটা প্রথম ওভারে উইকেটেই পেয়েছেন তিনি; মনে করেন হেরাথ।
সাকিবসহ পাঁচ বোলার নিয়ে খেলা প্রসঙ্গে হেরাথ বলেছেন, ‘আমি সবসময় বিশ্বাস করি টেস্টে পাঁচ বোলার নিয়ে খেলতে হবে। কারণ আমাদের ২০ উইকেট নিতে হবে। তাই পাঁচ বোলার নিয়ে খেলা ভালো। এটা সহজ আর একই সঙ্গে অন্যদের বিশ্রাম দেওয়া যায়। ২০ উইকেট নিতে হলে পাঁচ বোলার নিয়ে খেলাই ভালো। ’
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারাত্নে (৯) বড় কিছু করতে না পারলেও, তার সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করেছেন ওশাদা ফার্নান্দো (৩৬), কুশল মেন্ডিস (৫৪) ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজরা। ক্যারিয়ারের ১২তম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরিতে ১১৪ রানে অপরাজিত রয়েছেন লঙ্কানদের সাবেক অধিনায়ক ম্যাথিউজ।
দিনের প্রথম সেশনে অবশ্য সফরকারীদের চাপে রেখেছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের অষ্টম ওভারের প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসেই করুনারাত্নেকে ফেরান প্রায় ১৪ মাস পর টেস্টে ফেরা নাইম হাসান। পরে তার হাত ধরেই দ্বিতীয় সাফল্যও পায় বাংলাদেশ। এবার ২২তম ওভারে ওশাদাকে কট বিহাইন্ড করেন তিনি।
দ্বিতীয় সেশনে শুরু থেকেই পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন কুশল মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। সেশনের প্রথম ১১ ওভারে ৫৫ রান তুলে নেন তারা দুজন মিলে। তখন পর্যন্ত আক্রমণে আনা হয়নি সাকিব আল হাসানকে। অবশেষে ৩৬তম ওভারে বল হাতে নেন, থামান লঙ্কানদের রানের গতি।
সাকিবের সঙ্গে দারুণ হিসেবি বোলিং করেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। এ দুজন মিলে টানা ২০ ওভার বোলিং করে খরচ করেন মাত্র ২০ রান। তবে সুযোগ তৈরি করলেও দ্বিতীয় সেশনে মেলেনি কোনো সাফল্য। এই সেশনে মোট ৩২ ওভার খেলে ৮৫ রান নেন কুশল-ম্যাথিউজ।
তবে শেষ সেশনের শুরুর পর প্রথম বলেই কুশলের উইকেট পেয়ে যান তাইজুল। নাইমের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন ৫৪ রান করা কুশল। এরপর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি ধনঞ্জয় ডি সিলভা (৬) । সাকিবের বলে ব্যাট-প্যাড হয়ে ক্যাচ আউট হন তিনি। কিন্তু দিনের শেষ ভাগে সেই আশায় গুড়েবালি দেন লঙ্কানদের দুই অভিজ্ঞতম ব্যাটার দীনেশ চান্দিমাল ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। দুজন মিলে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২৪.৪ ওভার খেলে যোগ করেন ৭৫ রান। ইনিংসের ৮১তম ওভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন ম্যাথিউজ।
দিন শেষে ১৪ চার ও ১ ছয়ের মারে ২১৩ বলে ১১৪ রানে অপরাজিত রয়েছেন ম্যাথিউজ। চান্দিমাল ২ ছয়ের মারে করেছেন ৭৭ বলে ৩৪ রান। বল হাতে নাইমের সাফল্য দুই উইকেট। এছাড়া সাকিব ও তাইজুল ফিরিয়েছেন একজন করে ব্যাটারকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস: শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস, ১ম দিন শেষে: ২৫৮/৪, ৯০ ওভার (অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ ১১৪*, দিনেশ চান্ডিমাল ৩৪*, কুশল মেন্ডিস ৫৪, ওশাদা ফার্নান্দো ৩৬, দিমুথ করুনারত্নে ৯, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৬; নাইম হাসান ২/৭১, তাইজুল ইসলাম ১/৭৩, সাকিব আল হাসান ১/২৭)।