রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বন্যায় ফসলের ক্ষতি হলেও দেশে খাদ্যসংকট হবে না বলে আশ্বাস দিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেছেন, বোরো ফসলের কিছু ক্ষয়-ক্ষতি হলেও চাষাবাদ হয়েছে অনেক বেশি। এছাড়া ভারত সরকারিভাবে গম রফতানি বন্ধ করেনি বলেও জানান তিনি। রোববার (১৫ই মে) সিলেট সদর উপজেলায় খাদ্য গুদাম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।
মন্ত্রী বলেন, চাষাবাদ হয়েছে অনেক বেশি হওয়ায় আমাদের ধান-চালের শক্তিশালী একটি মজুত গড়ে উঠবে। এছাড়াও গত আউশ ও আমন ধানেরও আমাদের প্রচুর মজুত রয়েছে। বৃষ্টির কারণে আগামী আউশ ফসলও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই দেশে কোনোভাবেই খাদ্যসংকট তৈরি হবে না।
এসময় ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকারিভাবে ভারত গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। তবে বেসরকারিভাবে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তারা রপ্তানি বন্ধ করলেও এতে বাংলাদেশের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
উৎপাদিত গম ভারতকে বিক্রি করতে হবে জানিয়ে দেশটি দ্রুত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন খাদ্যমন্ত্রী।
গত এক বছর ধরে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষকদের উৎপাদিত ধান দিয়েই অভ্যন্তরীণ চালের চাহিদা মিটছে। তবে গম আমাদের দেশে হয় না, বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গম আমদানি করা হতো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। কিন্তু এই দু’দেশের যুদ্ধের সময়ে আমরা সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করেছি। পরবর্তীতে যা দরকার তাও ভারত থেকে আমদানি করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় দেশে অনেক পণ্যের দাম কম। সরকার পণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে নিরলস কাজ করছে।’
দেশ যাতে পেঁয়াজের সংকট না হয় সরকার সে চেষ্টা চালাচ্ছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে পেঁয়াজের দাম বাড়বে না।
এসময় মন্ত্রী জানান, সিলেটে ধান চাল সংরক্ষণের জন্য ২৫ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সাইলো নির্মানণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তিনি বলেন, খাদ্যশস্য মজুদ রখতে সিলেট বিভাগীয় শহরে স্থাপন করা হবে আধুনিক ‘রাইস সাইলো’। এ জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। জায়গা পাওয়া গেলেই সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শুরু হবে এর কাজ।
সিলেটে ‘রাইস সাইলো’ হলে ধানসহ কয়েক হাজার মেট্রিক টন খাদশষ্য মজুদ করে রাখা যাবে বলে জানান তিনি।
ধানের সরকারি দামের বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার বিভিন্নভাবে ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের সাহায্য করে এবং তাদের কাছ থেকে ঘোষণা দিয়ে দাম নির্ধারণ করে ধান কেনে। কৃষকরা যাতে বাজারে অন্যের কাছে ধান বিক্রি করে না ঠকে তাই এমনটি করা হয়। এবার ধানের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আর বাড়ানো হবে না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মত নাজমানারা খানুম, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরের ডিসি আজবাহার আলী শেখ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, সিলেটের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাঈন উদ্দিন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নয়ন জ্যোতি চাকমা, সিলেট সদর খাদ্য গুদামের (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সঞ্জয় মীতেই।
এরআগে দুপুর ১ টায় সিলেট সার্কিট হাউজে প্রশাসনিক কর্মকতাদের সাথে বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম প্রমুখ।
আজ দুপুরে বিমানযোগে ঢাকা থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান খাদ্যমন্ত্রী।