সিলেট ও সুনামগঞ্জে কমছে বন্যার পানি। দুই জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকার পানি নেমে গেলেও কয়েকটি উপজেলার নিম্নঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে আছে। সেখানে পানি ধীরগতিতে নামছে। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যার্তদের। পানি নামার সাথে সাথে ক্ষয়ক্ষতির চিত্রও স্পষ্ট হচ্ছে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় তিন উপজেলায় ১ হাজার ২০০ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ১৩০টি ঘর। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ঘরবাড়ি। এর মধ্যে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তাই সরকারের সহযোগিতা চাইছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলমান বন্যায় সিলেট মহানগরীর অধিকাংশ এলাকা, জেলার ১৩টি উপজেলা এবং সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় সবকটি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়। এরমধ্যে সিলেট নগরী ও জেলার ১৩টি উপজেলার সড়ক ও রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ খাতে প্রায় ৪০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য খাতে ২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও কৃষি খাতে ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গবাদিপশু পাখি, খড়-ঘাসসহ এ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৭০ টাকা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলা ও মৌলভীবাজার জেলার ৩টি উপজেলায় বন্যায় প্রাইমারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাবদ ক্ষতি হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এদিকে বন্যায় মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় মোট ১ হাজার ৪৭৭ টি প্রাইমারী স্কুলের মধ্যে বন্যায় কবলিত হয়েছে ৫৬৫টি। এরমধ্যে ২৬৭ স্কুলের ক্লাসরুমে পানি ঢুকেছে আর আঙ্গিনায় পানি উঠেছে ২৯৮টির। আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ১৪৩টি ও পাঠদান বন্ধ রয়েছে ৪৮০টি স্কুলে। সব মিলে সিলেট জেলায় ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

সুনামগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৩৬৮ প্রাইমারী স্কুলের মধ্যে বন্যা কবলিত হয়েছে ২১৩টি। ক্লাস রুমে পানি ঢুকেছে ৭০টির ও আঙ্গিনায় পানি ঢুকেছে ১৮৬টির। আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ৩৪টি ও পাঠদান বন্ধ রয়েছে ১২৪টি স্কুলে। সব মিলে বন্যায় সুনামগঞ্জে প্রাইমারী প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি ৮৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

এদিকে মৌলভীবাজার জেলায় বন্যার প্রকোপ দেখা না দিলেও ৩টি উপজেলায় বন্যায় কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে। কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলার ৪২৭টি স্কুলের মধ্যে বন্যা কবলিত হয়েছে ৫০টির বেশী স্কুল। ৩ উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ লাখ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেটের উপ পরিচালক মোহাম্মদ কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, চলমান বন্যায় সিলেট জেলায় বোরো জমি, আউশ বীজতলা ও সবজি ক্ষেত ডুবে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সুনামগঞ্জ জেলার উপ পরিচালক বিমল চন্দ সোম বলেন, চলমান বন্যায় সুনামগঞ্জে ১১০৪ হেক্টর ব্যুরো ধান, ৩৮ হেক্টর আউশ ধান, ১৮৯ হেক্টর বীজতলা ও ৯১ হেক্টর শস্যক্ষেত ডুবে গেছে। এতে ৫ কোটি টাকার বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সিলেটের তাদের অধিনস্ত ৭২ কিলোমিটার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। এর বাইরে আরও ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব রাস্তা জরুরী মেরামতের জন্য এখনই ৫ কোটি টাকা খরচ হবে। এছাড়া স্থায়ী মেরামতের জন্য প্রয়োজন ৭০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সিলেট জেলায় ক্ষতি ৭৫ কোটি টাকার বেশী।