বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রীর ব্রিফকেস নিয়ে ঢোকার চল যুগ যুগের। এটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই রেওয়াজ যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে। বাজেট ঘোষণার দিন প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অর্থমন্ত্রী সংসদে প্রবেশ করছেন ব্রিফকেস হাতে। এই ছবি দেখে মানুষ বুঝতে পারে অর্থমন্ত্রী বাজেট দেয়ার জন্য সংসদে ঢুকছেন।
হাতের ব্রিফকেসে লাখ লাখ কোটি টাকা, তবে মুদ্রায় নয়, ছাপানো বক্তৃতায়। সংসদে ঢুকে সেই টাকার অঙ্কেরই বয়ান দেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু ব্রিফকেসে বাজেট কেন? কেন অন্য কোনো ধরনের ফোল্ডারে নয়? অনেকের মনে এ প্রশ্ন। অর্থমন্ত্রীদের এই ব্রিফকেসের রীতি কবে থেকে শুরু হয়েছিল, তা জানার কৌতূহল হয়।
‘বাজেট’ শব্দটি ইংরেজি। বাংলায় এর পরিভাষা এখনও তৈরি হয়নি। সরকারি কাজে সর্বত্রই ইংরেজি বাজেট শব্দটিই ব্যবহার হয়। বাংলা একাডেমির অভিধানে বলা হয়, ১৯০২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলায় বাজেট শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।
শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে মধ্যযুগের ইংরেজি শব্দ ‘বুজেট’ থেকে। বুজেট শব্দের অর্থ ‘মানিব্যাগ’ বা টাকার থলে।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খানের সর্বশেষ বই ‘বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি’-তে ব্রিফকেসের বিষয়টি উলেখ করা হয়। বইটি থেকে জানা যায়, শিল্পবিপ্লবের পর ইংল্যান্ডের অর্থনীতি অনেক বড় হয়ে যায়। বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবগুলো শুধু একটা মানিব্যাগে সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছিল না। মানিব্যাগের জায়গায় তাই আসে ব্রিফকেস।
বইটিতে ব্রিফকেস ব্যবহারের আরেকটি কারণ উলেখ করা হয়। সেটি হচ্ছে, বাজেটে কোন কর বাড়বে বা কোন কর কমবে, তার গোপনীয়তা বজায় রাখা অপরিহার্য। ব্রিফকেসের ভেতরে থাকা বাজেটের কোনো তথ্য জেনে ব্যবসায়ীরা রাতারাতি তার ব্যবহার করতে পারেন। তাই সংগত কারণেই সংসদে বাজেট পেশের আগে প্রস্তাবগুলো গোপন রাখা চাই। যে অর্থমন্ত্রী বাজেটের গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারেন না, তাঁর পক্ষে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।
জানা যায়, বাজেট ব্রিফকেসের এই রীতি শুরু হয় ১৮ দশক থেকে। প্রথম শুরু হয় যুক্তরাজ্য থেকে। বাজেটপ্রধানকে এ ব্রিফকেস খুলে বাজেট পেশ করতে বলা হতো। ১৮৬০ সালে ব্রিটেনের বাজেটপ্রধান উইলিয়াম ই গ্ল্যাডস্টোন ‘লাল একটি স্যুটকেসে’ করে বাজেটসংক্রান্ত নথি নিয়ে আসেন। সেই স্যুটকেসের ওপর সোনা দিয়ে রানির মুখের আদলের ছাপ দেওয়া ছিল। ওই একই ব্যাগ বহু সরকারের আমলেই ব্যবহার করা হয়।