বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে যুক্তরাজ্যে দেশজুড়ে তিনদিনব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দেশটির রেলশ্রমিকরা। রেল, নৌপথ ও পরিবহন শ্রমিকদের সর্বোচ্চ সংগঠন ইউনিয়ন ফর রেল, মেরিয়টাইম অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স (আরএমটি) এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় রেল ধর্মঘট।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ধর্মঘট এড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের রেল বিভাগ ও শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে উভয় পক্ষ শেষ পর্যন্ত কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।

এর আগে সোমবার (২০শে জুন) এক বিবৃতিতে শ্রমিক ইউনিয়ন আরএমটি জানায়, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যজুড়ে সর্বাত্মক রেল ধর্মঘট হবে এবং আরএমটির নেতৃত্বে ৫০ হাজারেরও বেশি রেলকর্মী সেই ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করবে। লন্ডন পাতালরেলের কর্মীরা আগামী মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করবেন।

এটাকে ব্রিটেনের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রেল ধর্মঘট হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। দেশটিতে সর্বশেষ দেশজুড়ে রেল ধর্মঘট হয় ১৯৮৯ সালে। ৩৩ বছর পর আবারও ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। ধর্মঘটের কারণে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরএমটির নেতাদের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, করোনা মহামারির দুই বছর ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ফীতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এর প্রভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। বর্তামনে যুক্তরাজ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি গত ৪০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু রেলকর্মীদের বেতন এক পয়সাও বাড়েনি।

রোববার (১৯ জুন) স্থানীয় সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে এক সাক্ষাতকারে আরএমটির সেক্রেটারি মাইক লিঞ্চ বলেন, রেলকর্মীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবি দীর্ঘদিনের। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আরএমটি নেতাদের বৈঠক হয়েছিল; এবং সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে, চলতি বছরের শুরু থেকে রেলকর্মীদের বেতন ৭ দশমিক ১ শতাংশ বাড়ানো হবে।

কিন্তু বছরের ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও আমরা সরকারের প্রতিশ্র“তির বাস্তবায়ন দেখতে পাইনি। এদিকে প্রতিদিনই বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। জীবন-যাপন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। ন্যায্য মজুরির দাবি আদায়ের জন্য এই মুহূর্তে ধর্মঘটে যাওয়া ছাড়া রেলকর্মীদের সামনে আর কোনো বিকল্প পথ খোলা নেই, বলেন মাইক।

ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্যের যোগাযোগ ব্যাবস্থাও ব্যাপকভাবে রেলনির্ভর। করোনা মহামারির দ্ইু বছরে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল খাতে বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে ছাঁটাই করায় বর্তমানে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবাও সীমিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে মহামারি পরবর্তী অর্থনীতি সচল করার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, তাতে রেলের ওপর সাধারণ জনগণের নির্ভরতা আগের চেয়ে বেড়েছে কয়েকগুণ।