পার্টিতে অংশ নিয়ে নাচগান করার একটি ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সান্না মারিন। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে সান্না মারিন এবং তাঁর বন্ধুদের একটি পার্টিতে নাচতে ও গাইতে দেখা গেছে। এরপরেই তীব্র প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছেন ফিনল্যান্ডের এ নারী প্রধানমন্ত্রী।

তিনি ওই পার্টিতে মাদক সেবন করেছেন কি না, তা নিশ্চিত হতে তাঁকে স্বেচ্ছায় মাদক পরীক্ষা করানোর আহŸান জানিয়েছে বিরোধীরা। জোট সরকারের নেতাদের কেউ কেউও একই কথা বলছেন। তবে পার্টিতে মাদক গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বিবিসির।

বৃহস্পতিবার বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, ‘ওই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে ফিনল্যান্ডের এ নারী প্রধানমন্ত্রী তার নানান বন্ধু ও দেশটির সেলিব্রিটিদের সঙ্গে নাঁচছেন ও গাইছেন বলে দেখা গেছে। তাঁর বন্ধুদের মধ্যে ফিনল্যান্ডের সংগীতশিল্পী আলমাসহ কয়েকজন তারকা ছিলেন।,

অর্ধনগ্ন হয়ে এমন নাঁচ-গানের পর তিনি এখন দেশটির বিরোধী দলগুলোর সমালোচনার মুখোমুখি, হয়েছেন। সান্না মারিন (৩৬) ড্রাগ বা মাদক নেন কিনা তা পরীক্ষার দাবি করেছেন এক ফিনিশ নেতা।

তবে ফিনল্যান্ডের ওই নারী প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি কোনো মাদক গ্রহণ করেননি। তবে শুধুমাত্র অ্যালকোহল (মদ) পান করেছিলেন এবং উন্মত্ত হয়ে পার্টি করেছিলেন। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ এ প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই পার্টি করেন। প্রায়ই সংগীত উৎসবে গিয়ে ছবি তোলেন।

গত বছর সান্না মারিন এ কারণে জনগণের কাছে ক্ষমা চয়েছেন যে তিনি ক্লাবে যাওয়ার কারণে অনেক সময় করোনা রোগীর নিবিড় সান্নিধ্যে গিয়েছিলেন। এর আগে গত সপ্তাহে এ ফিনিশ নারী রাজনীতিবিদকে বিশ্বের সেরা প্রধানমন্ত্রী বলে অভিহিত করে জার্মান নিউজ আউটলেট বিল্ড।

গতকাল বৃহস্পতিবার ওই ভিডিও নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, তিনি জানতেন তাঁর ভিডিও করা হয়েছে, তবে ভিডিওটি প্রকাশ করায় তিনি মনোক্ষুণœ হয়েছেন।

মারিনের ভাষ্য, ‘আমি নেচেছি, গেয়েছি, পার্টি করেছি এগুলো সম্পূর্ণ বৈধ বিষয়। আমি কখনো এমন কোনো পরিস্থিতিতে পড়িনি, যেখানে আমি অন্যদের মাদক গ্রহণ করতে দেখেছি বা শুনেছি।’

এ বিষয়ে বিরোধী দলের নেতা রিক্কা পুররা এ নারী প্রধানমন্ত্রীকে স্বেচ্ছায় ড্রাগ পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তার মন্তব্য হলো, এ ফিনিশ প্রধানমন্ত্রীর ওপর প্রচ্ছন্ন সন্দেহ আছে।

মারিনের জোট সরকারের অন্তর্ভুক্ত দল সেন্টার পার্টির মিকো কারনা এক টুইটার পোস্টে বলেছেন, স্বেচ্ছায় মাদক পরীক্ষা করানোটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত হবে।

এদিকে মারিন সাংবাদিকদের বলেছেন তিনি মাদক গ্রহণ করেননি এবং পরীক্ষা করাতে তাঁর আপত্তি নেই।

মারিন বলেন, ‘আমার একটি পারিবারিক জীবন আছে, কর্মজীবন আছে এবং বন্ধুদের সঙ্গে কাটানোর মতো অবসর সময় আছে। আমার বয়সী অনেকের মতোই আমি থাকি।’

মারিন আরও বলেন, তিনি তাঁর আচরণ পাল্টানো দরকার বলে মনে করেন না, ‘এখন পর্যন্ত আমি যেমন আছি, তেমনই থাকতে চাই। আমার আশা, আমাকে সেভাবে মেনে নেওয়া হবে।’

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত আছেন মারিন। ফিনল্যান্ডের রাজনীতিবিষয়ক সাংবাদিক রবার্ট সুন্দামান বিবিসিকে বলেছেন, মারিনের ব্যাপারে দেশটির জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ মনে করেন এ বয়সী নারীদের তাঁদের বন্ধুদের সঙ্গে মজা করাটা স্বাভাবিক ঘটনা। আবার কেউ কেউ এ ঘটনায় আঘাত পেয়েছেন।

সুন্দামান বলেছেন, অতীতেও মারিনের পার্টি করার ছবি প্রকাশ হয়েছিল, কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁর কিংবা তাঁর দলের জনপ্রিয়তার ওপর এর প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।