ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ সোমবার (৬ই সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবে। দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে দু’দেশের শীর্ষ বৈঠকে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টায় হায়দরাবাদ হাউজে পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে দুই প্রধানমন্ত্রী একান্ত বৈঠকে বসবেন। দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে তাদের বৈঠক শেষ হবে। বৈঠক শেষে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে।
এরআগে সকাল ৯টায় রাইসিনা হিলে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে রাষ্ট্রীয় অভ্যার্থনা জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এসময় তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন ভারত সফররত প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে দিলির হয়দ্রাবাদ হাউজের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।
এর আগে আগে গতকাল শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। এ সময় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আজ অনুষ্ঠেয় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের প্রস্তুতি-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পায়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এস জয়শঙ্করের সাক্ষাৎ শেষে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গতকাল সকালে চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিলি পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিলির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করলে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাক্ষাৎকালে আলোচনার বিষয় সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন যে সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে সেটা কোনোভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে কিনা তা নিয়ে সবার মনে শঙ্কা রয়েছে।
সিনিয়র সচিব বলেন, তারা আমাদের বলেছেন যে ভারতও লক্ষ করছে যে এখানে কিছুটা অশান্তি বিরাজ করছে। কারো জন্য এটা মঙ্গলজনক নয়। এছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়ার যে সংকট, তাতে যে সমগ্র বিশ্বে অর্থনীতির ওপর বা বিভিন্নভাবে যে বিরূপ প্রভাব এসেছে, সবার ক্ষেত্রেই এটার প্রভাব পড়েছে। এ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কীভাবে সহযোগিতা আরো বাড়াতে পারি, যাতে এ সংকট মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করতে পারি সে বিষয়েও কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। মোটামুটি এ ইস্যুগুলোই আলোচনা হয়েছে।
জ্বালানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, কানেক্টিভিটি এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মূল আলোচনায় অবশ্যই এগুলো থাকবে। বিভিন্ন কৌশলগত পণ্য যেগুলো আমরা ভারত থেকে নিই, সেগুলোর ব্যাপারে কোনো একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভারত যাতে আমাদের জানায়। অর্থাৎ এসব পণ্য বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পূর্ব ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়। এনার্জি ট্রেডিংয়ের বিষয়েও আলোচনা হবে। এরই মধ্যে এক হাজার মেগাওয়াট আসছে। অর্থাৎ এটার সুবিধা আমরা ভোগ করছি। ভারতসহ নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে কীভাবে আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতে পারি তা আলোচনায় স্থান পাবে। তবে চলমান সংকটে ডিজেল থেকে আরম্ভ করে পেট্রল বা অন্যান্য জ্বালানি পণ্য কেনার ক্ষেত্রে অনেক দেশই সমস্যার মধ্যে পড়ছে। এটা নিয়েও আলোচনা হবে যে তাদের যদি উদ্বৃত্ত থাকে, সেটা কীভাবে আমরা মিউচুয়ালি এগ্রিড টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনসের মাধ্যমে সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারি। আমাদের চাহিদা যদি মেটাতে পারি, তাহলে বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে যে সংকট, সেটা আমরা সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারব বলে আমরা আশা রাখি।
সাতটা এমওইউর বিষয়ে ধারণা চাওয়া হলে সিনিয়র সচিব বলেন, আমাদের বেশ কয়েকটাই আছে। যেমন বাংলাদেশ টিভির সঙ্গে আছে, তারপর আমাদের বিএসআরআইয়ের সঙ্গে একটা আছে। সাতটা নিয়ে দুই দেশের কাউন্টার পার্ট মন্ত্রণালয়গুলো ফাইনাল টাচ যেটাকে বলে, সেটা করা হচ্ছে। হয়তো আজকে রাতে সেগুলোর প্রি-সিগনেচার হয়ে যাবে। দুই নেতা যখন কাল মিট করবেন, তখন সেগুলো হ্যান্ডওভার হবে বলে আমরা আশা করছি। কুশিয়ারাও আছে। সবগুলোই চূড়ান্ত হচ্ছে। আমরা আশা করছি আজকে রাতের মধ্যে এগুলো ক্লিয়ার হবে।
তিস্তা আলোচনায় থাকছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব বলেন, আলোচনায় সবই থাকবে, গঙ্গাও থাকতে পারে, কারণ ওটার চুক্তিও ওভার হয়ে যাবে, কিন্তু সামনে আরো আলোচনার আশা আছে।