নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুরে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া হোসেন অদিতাকে (১৪) ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন কোচিং শিক্ষক আবদুর রহিম রনি। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এমদাদ তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম নিজ কার্যালয়ে প্রেস কনফারেন্সে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জানান, ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি।

প্রেস কনফারেন্সে এসপি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, রনি নামে এক যুবকের কাছে প্রাইভেট পড়ত নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অদিতা। হঠাৎ করে অদিতা তার কাছে প্রাইভেট পড়তে অনীহা প্রকাশ করে এবং নতুন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে শুরু করে। এতে রনি ক্ষুব্ধ হয়। এ বিষয়সহ অদিতার ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানার জন্য তাৎক্ষণিক রনিকে প্রথমে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তখন তার তুথনি ও ঘাড়ে নখের আঁচড়ের তাজা দাগ পাওয়া যায়। নখের আঁচড়ের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে একেক সময় একেক তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্তের চেষ্টা করে। আঁচড়ের ব্যাপারে কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় তার বিষয়ে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। তখন তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের লক্ষে্য আদালতে সোপর্দ করে ১০দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়।

আদালত রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রনি ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন।

এসপি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে অদিতার বাসায় যান সাবেক কোচিং শিক্ষক রনি। বাসায় গিয়ে বন্ধ দরজা নক করলে অদিতা দরজা খুলে দেয়। তখন তিনি বাসায় ঢুকে অদিতার সঙ্গে গল্পগুজব করেন। গল্পগুজবের একপর্যায়ে রনি অদিতাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় অদিতা বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। তখন বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে রনি বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করে। পরবর্তীতে রান্না ঘর থেকে ছোরা এনে অদিতার বাম হাতের রগ এবং গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে হাতের বাঁধন খুলে দেয়।

এসপি বলেন, জবানবন্দিতে রনি বলেছে, সে এসব শিখেছে ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে। রনি ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে ঘরের আলমিরা ও ওয়ারড্রবের সব কাপড় চোপড় ও কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। এরপর ভেতরের রুমের দরজা লক করে এবং ঘরের মূল দরজা বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতী খীসা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. মোর্তাহীন বিল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) নাজমুল হাসান রাজিব, ডিআইও-১ মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সুধারাম মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলামসহ জেলায় কর্মরত প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, নোয়াখালী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনারায়ণপুর ইউনিয়নের নিজ বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে তাসনিয়া হোসেন অদিতা (১৪) নামে অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

অদিতা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনারায়ণপুর ইউনিয়নের আবুল খায়ের পেশকার বাড়ির মৃত রিয়াজ হোসেনের মেয়ে। সে নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই সদস্যরা। এ ঘটনায় গৃহশিক্ষক আবদুর রহিম রনিসহ (২৫) ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। গৃহশিক্ষক আবদুর রহিম রনিকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।