২০২২ সালে শান্তিতে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেল বেলারুশের মানবাধিকার কর্মী আইনজীবী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি , রাশিয়ার মানবাধিকার সংস্থা ’মেমোরিয়াল’ এবং ইউক্রেনের মানবাধিকার সংস্থা ‘সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ’। আজ শুক্রবার (০৭ই অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকাল তিনটায় শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে নাম ঘোষণা করে নরওয়ের নোবেল কমিটি।
নোবেল কমিটি জানায়, ‘নিজেদের মানবতাবাদী মূল্যবোধ, সামরিকবাদের বিরোধিতা ও আইনের পক্ষে ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীরা আলফ্রেড নোবেলের শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গিকে পুনরুজ্জীবিত এবং সম্মানিত করেছেন। এমন দৃষ্টিভঙ্গি আজকের বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন’।
আলেস বিলিয়াতস্কি: আলেস বিলিয়াতস্কি ১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি বেলারুশে গণতন্ত্র আন্দোলনের সূচনাকারীদের একজন। বিলিয়াতস্কি তার দেশে গণতন্ত্রের প্রচার ও শান্তিপূর্ণ উন্নয়নে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু বেলারুশের সরকারি কর্তৃপক্ষ বারবার তার মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। ২০২০ সাল থেকে এখনো বিনাবিচারে বন্দি রয়েছেন তিনি। প্রচণ্ড কষ্ট সত্ত্বেও বিলিয়াতস্কি বেলারুশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেননি।
মেমোরিয়াল: রুশ মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়ালের বিষয়ে বলা হয়েছে, চেচেন যুদ্ধের সময় জনগণের বিরুদ্ধে রুশ ও রুশপন্থি বাহিনীর অত্যাচার এবং যুদ্ধাপরাধের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইবাছাই করেছে সংস্থাটি। ২০০৯ সালে চেচনিয়ায় মেমোরিয়াল শাখার প্রধান নাটালিয়া এস্তেমিরোভা এই কাজের কারণে নিহত হন।
নতুন অপরাধ আটকাতে অতীতে সংঘটিত অপরাধের মুখোমুখি হওয়া অপরিহার্য, এমন ধারণার ওপর ভিত্তি করেই সৃষ্টি হয়েছিল মেমোরিয়াল। সামরিকবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আইনের শাসননির্ভর সরকার ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রচারণার অগ্রভাগে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটি।
১৯৮৭ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মানবাধিকার কর্মীদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মেমোরিয়াল। কমিউনিস্ট শাসকদের নির্যাতনের শিকার মানুষদের যেন কখনো ভুলে যাওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্য ছিল সংস্থাটির।
সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ: ইউক্রেনীয় মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ প্রসঙ্গে নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর সংস্থাটি ইউক্রেনের জনসাধারণের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধ শনাক্ত ও নথিভুক্ত করার প্রচেষ্টায় নিযুক্ত হয়। এটি অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
No description available.এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ২০২২ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেন ফরাসি লেখক আনি আরনো। সবশেষ ২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল পান ফিলিপাইনি বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক মারিয়া রেসা এবং রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মোরাতোভ। মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় নিজেদের ভূমিকার কারণে মারিয়া রেসা এবং দিমিত্রি মোরাতোভকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
২০২০ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার লড়াইয়ে অনন্য ভূমিকার জন্য সংস্থাটিকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। আর ২০১৯ সালে এই পুরস্কার জেতেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান পুরস্কার ভূষিত হন তিনি।
এর আগে নেলসন ম্যান্ডেলা, মাদার তেরেসা ও বারাক ওবামার মতো ব্যক্তিত্বরা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।