ফুটবল জাদুকর দিয়াগো ম্যারাডোনার ৬২তম জন্মদিন আজ। ১৯৬০ সালের এই দিনে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস প্রদেশের লানুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন আর্জেন্টাইন এই জাদুকর। হাসি-আনন্দে ব্যস্ত থাকা এই কিংবদন্তি এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন দুই বছর হলো।
সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম তিনি। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী তারকা। অনেকের কাছে তিনি আবার ফুটবল ঈশ্বর, সেরাদের সেরা। যত নামেই ডাকা হোক না কেন, তিনি আর্জেন্টাইন ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা। বল পায়ে দক্ষ নিয়ন্ত্রণ, চিতার বেগে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক ঐতিহাসিক মুহূর্ত আর গোল বিশ্বসেরা ফুটবলারের বিতর্কে তাকে রেখেছে বেশ উঁচু স্থানে।
১৯৮৬ সালে ২৫ বছর বয়সে মেক্সিকোতে একাই প্রায় আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘হ্যান্ড অফ গড’ আর মাঝমাঠ থেকে ছয়জনকে কাটিয়ে সেই গোল ফুটবল বিশ্বকে আজও সম্মোহিত করে।
১৯৬০ সালের এই দিনে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস প্রদেশের লানুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন ম্যারাডোনা। দক্ষিণ প্রান্তের শহর ভিয়া ফিওরিতোতে তার বেড়ে ওঠা। তিন কন্যা সন্তানের পর তিনিই ছিলেন মা-বাবার প্রথম পুত্র সন্তান। তার ছোট দুই ভাই হুগো এবং রাউলও পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। তার একটি অমর বানী হলো, ‘মানুষ শুধুমাত্র তখনই সফল হয়, যখন সে কঠোর পরিশ্রম করে। সাফল্যের সাথে ভাগ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। ম্যারাডোনার বাণীটি যেন তার নিজ খেলোয়াড়ি জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। বল পায়ে দক্ষ নিয়ন্ত্রণ, চিতার বেগে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়া তাকে নিয়ে গেছে বেশ উঁচু স্থানে।
মাত্র দুই দশকের পেশাদার ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনা খেলেছেন ছয়টি ক্লাবে। ষোল বছর বয়সে পা দেবার ঠিক দশদিন আগে নিজ শহরের ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে অভিষেক ঘটে তার, বর্তমানে যাদের হোম গ্রাউন্ডের নামকরণ হয়েছে ম্যারাডোনারই নামে। তবে ক্লাব ক্যারিয়ারে বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলিসহ নানা ক্লাবে খেলেছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো নাপোলিকে একক কৃতিত্ব চ্যাম্পিয়ন করা। তিনি ক্লাবটির অধিনায়কত্ব গ্রহণ করে ক্লাবটিকে নিয়ে যান ইতিহাসের সফলতম পর্যায়ে। মিলান, ইন্টার, জুভেন্টাস, রোমার আধিপত্য চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে নাপোলিকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত সিরি আ শিরোপা। ১১৫ গোল নিয়ে নাপোলির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাও ছিলেন ম্যারাডোনা, যদিও ২০১৭ সালে রেকর্ডটি নিজের করে নেন মারেক হামসিক।
১৯৮৬ বিশ্বকাপে তার অসাধারণ নৈপুন্যে বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। সেই আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ‘হ্যান্ড অব গড গোল’ ও শতাব্দীর সেরা গোলটি। এরপর ১৯৯০ বিশ্বকাপেও দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। এই আসরে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হন এই ফুটবল কিংবদন্তী। ফলে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরলেও স্বাভাবিক ছন্দে দেখা যায়নি ম্যারাডোনাকে। ১৯৭৭ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের পর ক্লাব ও জাতীয় দল মিলে আর্জেন্টাইন মহাতারকা ক্যারিয়ারে মোট গোল করেছেন ৩৪৬টি।
ক্যারিয়ারে কোচিংও করেছেন ম্যারাডোনা। ২০০৮ সালে ছিলেন মেসিদের কোচ। সেবার নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আর্জেন্টিনা নিশ্চিত করে ২০১০ বিশ্বকাপের টিকিট। বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার দল কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে হজম ৪ গোল হজম করে বিদায় নেয়।
ফুটবল বিশ্বে কিংবদন্তির মর্যাদাপূর্ণ খেলোয়াড়ের জীবন থামে ২০২০ সালের ২৫শে নভেম্বর। ৬০ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
