৯/১১ হামলা সম্পর্কিত যেসব গোপন নথি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে তা যদি উন্মুক্ত না করলে স্মরণ অনুষ্ঠানগুলোতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আসতে না করেছে হামলায় হতাহতদের পরিবার।

প্রেসিডেন্টকে লেখা এক চিঠিতে পরিবারগুলোর প্রায় এক হাজার ৮০০ সদস্য ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা সংক্রান্ত গোপন নথি দ্রুত প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, গোপন নথিগুলোতে দুই দশক আগের হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সৌদি আরবের কর্মকর্তারা যে জড়িত তা বেরিয়ে আসবে বলে সন্দেহ অনেকের।

হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের ধারণা, সৌদি কর্মকর্তারা ৯/১১ সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলেন, এবং হামলা ঠেকাতে তারা কিছুই করেননি।

তাদের দাবি, বেশিরভাগ তদন্তেই হামলায় সৌদি কর্মকর্তাদের সায় থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত মিলেছে। যদিও সৌদি শুরু থেকেই ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

হামলায় হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের লেখা চিঠিতে স্মরণ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও পেনিসিলভানিয়ার যে ৩টি স্থানে হামলা হয়েছে সেগুলো থেকেও দূরে থাকতে বাইডেনকে অনুরোধ করা হয়েছে।

বাইডেনের আগের তিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বারাক ওবামা ও জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসন ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ দোহাই দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা ৯/১১ সংক্রান্ত নথি প্রকাশে আপত্তি জানিয়েছিল।

হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, একাধিক প্রশাসন, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এবং এফবিআই সক্রিয়ভাবে চায় সেসব তথ্য গোপন থাকুক। তারা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ৯/১১ হামলা সম্পর্কে সব সত্য জানতে দিতে চায় না।

তাদের মতে, ২০ বছর পর জাতীয় নিরাপত্তা বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক, এসব তথ্য গোপন রাথার কোনো কারণ থাকতে পারে না। প্রেসিডেন্ট বাইডেন যদি তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি ফিরিয়ে নেন এবং সৌদি সরকারের পাশে গিয়ে দাঁড়ান, আমরাও তাহলে ৯/১১ স্মরণ অনুষ্ঠানগুলোতে তার প্রশাসনের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে দাঁড়াতে বাধ্য হব।

২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে ওই ভয়াবহ হামলায় ২ হাজার ৭৫৩ জন প্রাণ হারান। ওসামা বিন লাদেনের নির্দেশে আল কায়েদা ওই হামলা চালায় বলে দাবি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

টুইন টাওয়ারের দুই ভবনে হামলার পর তৃতীয় বিমান হামলা পেন্টাগনে এবং চতুর্থ হামলা হয় পেনসিলভানিয়ায়। পরের দুটি হামলাই ব্যর্থ হয়।

এদিকে টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ হামলার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ভুলবশত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সৌদি আরবের জড়িত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছে বলে দাবি করেছে মার্কিন গণমাধ্যম ইয়াহু নিউজ।

গতবছর গণমাধ্যমটির একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর এফবিআই কর্মকর্তা জ্যাকব কে জ্যাভিটস হামলার ঘটনায় যে প্রতিবেদন দাখিল করেন, তাতে ওই নাশকতার জন্য সৌদি আরবের অর্থায়নের কথা উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনটিতে অর্থদাতা হিসেবে সৌদি কূটনীতিক মুসাদ আহমেদ আল-জাররাহর নাম উঠে আসে। এর পর থেকেই সৌদি-মার্কিন সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়।

এতে বলা হয়, হামলায় ব্যবহৃত বিমান হাইজ্যাক করা দুই আল কায়েদা সদস্যকে টাকা দিয়েছেন ওই সৌদি কূটনীতিক।

কিন্তু ইয়াহুর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, টুইন টাওয়ার হামলার প্রতিবেদনে সৌদি কূটনীতিকের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি ভুল করে এসেছে।

আর ভুলটা হয়েছিল ৯/১১ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের করা মামলার কারণে। তারা মামলার আর্জিতে হামলায় সৌদি আরব জড়িত বলে উল্লেখ করায় প্রতিবেদনে এফবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তাও ভুল করে প্রতিবেদনে ওই কূটনীতিকের নাম আন্তর্ভুক্ত করেন।