প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামির মুক্তির জন্য সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে বলে বিএনপি-জামায়াত। আজ (মঙ্গলবার) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি আন্দোলনে শহীদের তালিকা যদি দেখি, সেখানে ছাত্রলীগের শহীদের তালিকাই বড়। ৭৫ এর পর জিয়াউর রহমান যখন অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে, তার প্রতিবাদকারী হাজারো সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনীর অফিসারদেরকে জিয়াউর রহমান যেমন হত্যা করেছে, ঠিক একইভাবে ছাত্রলীগের নেতা সেই বাবুসহ অনেককে গুম করে নিয়ে গেছে। তাদের পরিবার লাশও পায়নি। এভাবে অত্যাচার নির্যাতন করেছে।
তিনি বলেন, তারই (জিয়ার) পদাঙ্ক অনুসরণ করে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করে। ঠিক একই কায়দায় জেনারেল এরশাদও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আক্রমণ, নানা ধরনের ঘটনা ঘটায়। সেখানও আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার করে। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে যেমন অত্যাচার এবং ৯৬ এ ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে, আবার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেও খালেদা জিয়ার পেটুয়া বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়’, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার মনে থাকা উচিত, ২০০১ সালে যখনই খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অফিসে ছাত্রদলের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গিয়ে ভিসিকে চেয়ার থেকে সরিয়ে দিয়ে তাদের মনমতো একজনকে বসিয়ে দিলো। রাতের অন্ধকারে ভিসি পদটাও তারা দখল করে নিলো। ২০০২ সালে শামসুন্নাহার হলে গিয়ে মেয়েদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করে। একদিকে ছাত্রদল, আরেকদিকে পুলিশ বাহিনী দিয়ে অত্যাচার চালিয়েছিল এই খালেদা জিয়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর তাহের ও ইউনূসকে হত্যা করে। তাদের অত্যাচারে সারা বাংলাদেশ ছিল অত্যাচারিত, নির্যাতিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘যখনই তারা ক্ষমতায় আসে, আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। শুধু ক্ষমতায় থাকলেই না, ক্ষমতার বাইরে থাকলেও তাদের যে অগ্নি-সন্ত্রাস, সেটা তো সকলেরই জানা। ২০১৩ সালে আন্দোলনের নামে অগ্নি-সন্ত্রাস করে প্রায় ৩ হাজার মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করে, ৫০০ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারে। সাড়ে ৩ হাজারের ওপর গাড়ি, বাস, লঞ্চ, রেল পুড়িয়ে দেয়, কোনো কিছুই ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এটাই তাদের চরিত্র’, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা। পুরনো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী যারা আছেন, তাদের নিশ্চই মনে আছে, খালেদা জিয়া হুমকি দিয়েছিল, আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে তার ছাত্রদলই নাকি যথেষ্ট। তারা ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রদের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। আমাদের শক্তি জনগণ। আমাদের পেটুয়া বাহিনী লাগে না।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা শিক্ষা গ্রহণ করবে। শিক্ষা গ্রহণ করে উপযুক্ত নাগরিক হবে, দেশের দায়িত্বভার ভবিষ্যতে নেবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমি ছাত্রদের হাতে কাগজ-কলম তুলে দিয়ে বলেছিলাম, কেবল নিজেরা শিক্ষিত হবে না, যখন ছুটিতে বাড়িতে যাবে, কোনো নিরক্ষর মানুষ পেলে তাদের স্বাক্ষর-জ্ঞান দেবে। ছাত্রলীগ সেটাই করেছিল। নিজ নিজ গ্রামে তারা শিক্ষা ছড়িয়েছিল এবং তার রিপোর্টও আমাকে দিয়েছিল’, যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করতো না জিয়া। রাজনীতিতে-ভোটে নিষিদ্ধ ছিলো যারা সেই জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলো জিয়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন বঞ্চিত করেছিলো। ক্যান্টমেন্টে জনগণের অধিকার বন্দি করা হয়েছিলো। তখন কারফিউ গণতন্ত্র ছিলো।
তিনি বলেন, তারেক জিয়া খালেদা জিয়া হত্যাকারী, অর্থপাচারকারী, এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী। তাদের শাসনামলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিলো দেশ। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বিএনপির আমলে। সরকার উৎখাতের জন্য যেসব বুদ্ধিজীবী তাদের সাথে হাত মিলায় তারা বুদ্ধিজীবী না তারা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে নমিনেশন বাণিজ্য করে। এভাবে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া যায়না। যাদের জন্মই হয়নি গণতান্ত্রিকভাবে, সেই দল বলছে গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। জনগণের ভোট নিয়েই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ সবসময় গণমানুষের পাশে থাকবে। উন্নত দেশ গড়তে কাজ করে যাবে।
ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।