বর্ণময় ও রঙিন ফুটবল জীবন পাড়ি দিয়ে অবশেষে স্বপ্ন ছুঁয়েছেন ফুটবল বিশ্বের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লিওনেল মেসি। তার মাথায় উঠেছে বিশ্ব ফুটবলের মুকুট। তাঁর এ স্বপ্ন পূরণে যেন শুধু মেসি নয়, মন ভরেছে ফুটবল প্রেমীদেরও। তাঁর এই বিশ্বকাপ জয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর।
ঈশ্বর কী তবে তাকাবেন এবার? নাকি খালি হাতে ফেরাবেন ফুটবল জাদুকরকে? সবাই যখন এমন আশা আর আশঙ্কার দোলাচলে তখনও তিনি মগ্ন সৃষ্টিশীলতায়। মগ্ন সবুজ মাঠে নিজেকে নতুন করে আবিস্কারের নেশায়। তাই কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে তাঁর পায়ের জাদুদেখিয়ে দিলেন লিওনেল মেসি।
রোজারিওর লিও’কে মেসি নিজেই পরিচিত করেছিলেন। প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়াই ছিলো তাঁর জীবনের সাধনা। ২০০৬ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নজর কাড়েন সবার। এরপর ক্লাব ফুটবলে বিশ্ব দেখে তাঁর শৈল্পিক মহড়া। বার্সেলোনার হয়ে ৬৮৭ গোল দিয়ে শীর্ষ গোলদাতা, ১১টি শিরোপা, ৪টি চ্যাম্পিয়নস লীগের ট্রফি, সর্বাধিক গোল্ডেন বুট জয় সবই তাঁর ঝুলিতে। আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা, পেলে-ম্যারাডোনাকে টপকে লাতিন আমেরিকার সর্বোচ্চ গোলদাতা, সর্বকালের সবেেচয়ে বেশি ব্যালন ডি-অর ও ফুটবলের ইতিহাসে সর্বাধিক সময় ধরে শীর্ষস্থান ধরে রাখাসহ বহু রেকর্ড গড়ে, ফুটবল বিশ্বের পরাক্রমশালী মহারাজা হয়ে উঠেন।
মেসিই সেই ফুটবলার ২০১৪ বিশ্বকাপে পরাজয়ের পর যার কান্নায় কেঁদেছে বিশ্ব ফুটবল। বলা হয়ে থাকে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, কিন্তু মেসিই একমাত্র খেলোয়াড়, যার ক্ষেত্রে বলা হয়, দলের চেয়েও ওপরে তিনি। প্রতিদ্ব›দ্বী দলেও আছে যার অগণিত ভক্ত। তিনি অদম্য-অপ্রতিরোধ্য। ২০১৮ বিশ্বকাপে হোঁচট খেলেও যার পায়ের নিচে ফুটবল সাম্রাজ্য ঠাঁই নিয়েছে, তারই কী তবে আকাশি-সাদা জার্সি গায়ে বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফি ছোঁয়া হবেনা? স্বপ্নভঙ্গের পর কান্না লুকিয়ে আবারও শপথ নিলেন ঘুরে দাড়াঁনোর। সোনালী ট্রফিটাও যেন খুব করে চাচ্ছে মেসির হাতের স্পর্শ। কাতার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হারের পরও নায়কের বেশে দলকে নিয়ে গেলেন সেই স্বপ্ন জয়ের চূড়ায়। যেই চূড়ায় দাঁিড়য়ে সোনালী ট্রফিটাও যেন বলছে ’হিমালয় তুমি সরে দাড়াঁও, আমি ফুটবলের কবিকে বরণ করে নেব’।
রাত জেগে আকাশি-সাদা জার্সিতে এই শিল্পীর শৈল্পিক ড্রিবলিং দেখলেন ফুটবল বিশ্ব। অবশেষে বিশ্ব ফুটবলের ট্রফি উঁচিয়ে স্বপ্ন ছোঁয়ার আনন্দ মাতলেন এই ফুটবলশ্রস্টা। তিনি ফুটবলের মহারাজা হয়ে থাকবেনকোটি ফুটবল প্রেমীর অন্তরে, বহু বছর, বহুকাল।