উন্নত জীবনের আশায় সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে নৌকাডুবিতে অন্তত ২০ জন রোহিঙ্গা মারা গেছেন। মিয়ানমারের সংখ্যালঘু শত শত রোহিঙ্গা মুসলিমকে বহনকারী কয়েকটি নৌকা ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছালেও অনেকে ভারত মহাসাগরে ভেসে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এই তথ্য জানিয়েছে।

সোমবার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের তীরে ভেসে আসা একটি নৌকা থেকে ১৭৪ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় দুর্যোগ সংস্থার কর্মকর্তারা। কয়েক সপ্তাহ ধরে সমুদ্রে ভেসে থাকার কারনে তাদের বেশিরভাগই পানিশূন্য, ক্লান্ত এবং জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই অঞ্চলের চারপাশে নৌকা অবতরণ এবং উদ্ধারের একটি সিরিজের মধ্যে এই এটি সর্বশেষ।

এরআগে রোববারও ৫৭ জন রোহিঙ্গা আচেহ পৌঁছেছিল এবং নভেম্বরে সম্মিলিত ২৩০ জনকে বহনকারী অন্য দুটি নৌকা সেখানে পৌঁছেছিল।

রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রদানকারী আরাকান প্রজেক্টের ক্রিস লেওয়া বলেন, নৌকাটি আগের মতোই নিখোঁজ এবং ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল।

ইউএনএইচসিআর সোমবার বলেছে, ২০২২ রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় এক দশকের মধ্যে সমুদ্রে সবচেয়ে মারাত্মক বছরগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে। কারণ তাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে মরিয়া অবস্থায় পালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত হয়ে আসছে। বছরের পর বছর ধরে অনেকে থাইল্যান্ডের মতো দেশে এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পালিয়ে গেছে নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে যখন সমুদ্র শান্ত হয়।

২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর নির্মম নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা কয়েক লাখসহ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তবে প্রতি বছর হাজার হাজার রোহিঙ্গা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই অঞ্চলের অন্যান্য মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ভ্রমণের জন্য বিপদজনক যাত্রা করে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, আনুমানিক ২ হাজার ৪০০ জন রোহিঙ্গা এই বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে সমুদ্রপথে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ছেড়েছে। তবে তাদের বাংলাদেশ ত্যাগের কারণ কী তা স্পষ্ট নয়।

কিছু সমাজকর্মী বিশ্বাস করেন যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আশেপাশে কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নেয়া এবং উন্নত জীবনের আশা একটি কারণ হতে পারে। মালয়েশিয়া নৌকাগুলোর জন্য একটি সাধারণ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে এবং পাচারকারীরা সেখানে শরণার্থীদের একটি ভাল জীবন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

ইন্দোনেশিয়ায় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে চিকিৎসা নেয়া এক রোহিঙ্গা উমর ফারুখ বলেছেন, আমরা এখানে সবচেয়ে বড় বাংলাদেশ শরণার্থী শিবির থেকে এই আশা নিয়ে এখানে এসেছি যে ইন্দোনেশিয়ান জনগণ আমাদের শিক্ষার সুযোগ দেবে।