ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গাড়িচাপা দিয়ে নারীকে হত্যার ঘটনায় আটক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহ মারা গেছেন। আজ (শুক্রবার) ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাপসাতালে নিয়ে আসা হয়। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া শুক্রবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ২ ডিসেম্বর বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাঞ্চল্যকর দুর্ঘটনা ঘটে। এতে রুবিনা আক্তার (৪০) নামে এক নারী নিহত হন। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
ওইদিন ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহ। চারুকলা অনুষদের উল্টো পাশের টিএসসি অভিমুখী সড়কে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কায় দেন তিনি। এতে মোটরসাইকেলের থাকা রুবিনা আক্তার পড়ে যান এবং প্রাইভেটকারের নিচে চাপা পড়ে আটকে যান।
তবে এরপরও প্রাইভেটকারের চালক গাড়ি না থামিয়ে বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকেন। পথচারীরা তাকে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। গাড়ির নিচে আটকে থাকা নারীকে নিয়েই টিএসসি থেকে বেপরোয়া গতিতে নীলক্ষেতের দিকে যান চালক। পেছনে পথচারীরা তাকে ধাওয়া করেন।
পরে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ থেকে পলাশী অভিমুখী সড়কের মুখে চালককে আটকে রুবিনাকে উদ্ধার করেন পথচারীরা। এসময় চালক জাফরকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। পরে দুজনকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ছিলেন আজহার জাফর শাহ। ২০০৭ সালে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ দেয় কর্তৃপক্ষের কাছে। বিভিন্ন সময় পরীক্ষায় নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও উঠে তার বিরুদ্ধে। এমনকি ব্যক্তিগত ক্ষোভের জেরে একসঙ্গে ৮০ শিক্ষার্থীকে ‘শূন্য’ দেয়া ছাড়াও নানা অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করা হয় এবং জাফর শাহকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। কিন্তু তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করেননি, নোটিশেরও জবাব দেননি।
তাকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হলেও শর্ত পূরণ করতে না পারায় পুনরায় সহকারী অধ্যাপক পদে পদাবনতি দেয়া হয়। ১০ বছর পর ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাফর শাহকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।