বিধ্বংসী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা ১৯ হাজার ছাড়াল। গত সোমবার ভোরের দিকে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।আজও (বৃহস্পতিবার) চলছে উদ্ধার অভিযান।
দুর্গম অনেক অঞ্চলে উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারেনি উদ্ধার কর্মীরা। জীবিতরাও শূন্য তাপমাত্রায় দিন রাত খোলা আকাশের নিচে কাটাচ্ছে। প্রয়োজনীয় সহায়তা না পাওয়া ও উদ্ধারকাজে ধীরগতিতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তুর্কি প্রেসিডেন্টও প্রস্তুতির ঘাটতির কথা স্বীকার করেছেন।
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় গজিয়েনতেপ প্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন কেবলই ধ্বংসস্তুপ। রড সিমেন্ট ইট বালু আর ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোথাও যেন প্রাণের চিহ্ন নেই। অথচ দিন তিনেক আগেও এখানে ছিল সুউচ্চ ভবন, বাড়িঘর আর প্রাণের স্পন্দনে কোলাহল মুখর। এখন তা নিস্তব্ধ এক মৃত্যুপূরী।
গজিয়েনতেপ সংলগ্ন সিরিয়ার সীমান্তবর্তী কয়েকটি শহর রীতিমত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন মিলছে হাজারো মৃতদেহ। এখন এসব এলাকায় কেবল লাশের গন্ধ।মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তাও বলা সম্ভব হচ্ছে না।
ভূমিকম্পের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও কিছু দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছাতে পারছেন না উদ্ধারকর্মীরা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার পাশাপাশি তুষারপাত আর বৃষ্টিতে উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হচ্ছে।প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তাও পাঠানো যাচ্ছে না। হাজার হাজার বাড়িঘর ভবনের ধ্বংসাবশেষ সরানো, আটকে মানুষ উদ্ধারে যে জনবল ও প্রস্তুতি দরকার তার ঘাটতি আছে তুরস্কের সরকারি প্রশাসনের।
দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত সংগঠনগুলো।
তুরস্ক ও সিরিয়ার কোথাও তাপমাত্রা নেমে গেছে ৩ ডিগ্রিতে, কোথাও আবার হিমাঙ্কের নিচে। ভূমিকম্প থেকে ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলেও মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও জুটছে না। অসহনীয় এই ঠান্ডার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বা তাঁবুতে থাকতে হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধসহ সবাইকে।
ধ্বংসস্তুপ থেকে একটু পর পরই মরদেহ উদ্ধার করতে করতে উদ্ধারকর্মীরাও ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। মৃতের সংখ্যা যেন গুনে শেষ করতে পারছেন না তারা। কোথাও কোথাও মরদেহের পরিমাণ এতই যে, এগুলো বহনের পর্যাপ্ত ব্যাগের সংকট দেখা দিয়েছে।
উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকারী ও চিকিৎসা দেয়ার দল। বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধারকারী ভারী যন্ত্রপাতি, অনুসন্ধানী কুকুর পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে ততই কমছে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়াদের জীবিত থাকার সম্ভাবনা। উদ্ধারকাজে গাফিলতি হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের। ক্ষোভ আর হতাশা বাড়ছে বিভিন্ন এলাকায়।
যুদ্ধবিধ্বস্তসিরিয়ার অবস্থা আরও খারাপ।সেখানেও উদ্ধার অভিযানে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন উদ্ধারকারীরা। সরকারের পক্ষ থেকেও পর্যাপ্ত সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না।