রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর আজ। এই যুদ্ধের পরিণতিতে নানা সঙ্কট ও অনিশ্চয়তায় মুখে রয়েছে পুরো বিশ্ব। যুদ্ধে হাজারো ইউক্রেনীয় প্রাণ হারিয়েছেন। দু’দেশের সেনাবাহিনীর বহু সদস্যও নিহত হয়েছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতায় জ্বালানিসহ খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দাম ভোগাচ্ছে পুরো বিশ্বকে। কিয়েভে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আকস্মিক সফরের পরই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্থগিত করেছে রাশিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, বরাবরের মতোই ইউক্রেনের পাশে থাকবে পশ্চিমা দেশগুলো।

এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কোন দিকে মোড় নেবে এ নিয়ে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মত প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের শান্তির গন্তব্য বহু দূরে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ২৪শে  ফেব্র“য়ারি  ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এনিয়ে যুদ্ধের বছরপূর্তির প্রাক্কালে পুতিন সেই নির্দেশের সমর্থনে কথাও জানান। তবে শক্তিধর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন খুঁজে বেড়াচ্ছেন বলেও জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুতিন যখন জাতীয় ভাষণে জ্বালাময়ী কথা বলছেন, ঠিক তখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি খেরসনে রাশিয়ার হামলার শোকে বিলাপ করছেন। সংবাদমাধ্যমটিতে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন মত দিয়েছেন। অনেকেই বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন কারো পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই। আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়াকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য জয় আসা উচিত বলেও মনে করেন অনেকে। এছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে বলে।

যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে আশংকার যেন শেষ নেই দাবি করে বলেন, দুই দেশের  কোনো পক্ষেরই জয়ের সরাসরি কোনো পথ পরিষ্কার নয়। ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়ার লক্ষ্যে পরিবর্তন আসেনি বলে মনে করেন ওয়াশিংটন-ভিত্তিক জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পাভেল লুজিন।

জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসবিদ নিকোলায় মিত্রোখিন বলেন, মৌলিক দৃশ্যকল্প রাশিয়া কিংবা ইউক্রেন কোনো দেশই তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। রাশিয়ার গোটা দনবাস দখলের সক্ষমতা নেই বললেই চলে। দেশটি জাতি হিসেবে ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দেবে এটা অনেকের ধারনা।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সাবেক উপ-প্রধান ইহর রোমানেঙ্কো বলেন, ‘জানুয়ারির শেষদিক থেকে রাশিয়ান বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে। খারকিভের কিপিয়ানস্ক থেকে দীর্ঘ একটি যুদ্ধক্ষেত্র রয়েছে। পাঁচ দিক- কুপিয়ানস্ক, লেম্যান, বাখমুত, আদভিভকা ও শাখতার থেকে ভুহলেদার পর্যন্ত সমস্ত পথ, হাজার কিলোমিটারের বেশি হবে।

লন্ডনের কিংস কলেজের রুশ রাজনীতির অধ্যাপক গুলনাজ শরাফুতদিনোভা বলেন, ‘যুদ্ধের শুরুতে থাকা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি সামরিক বিপর্যয় স্বত্বেও এখনো পুতিনের অবস্থান সুদৃঢ়। রাশিয়ার সক্ষমতাকে উপেক্ষা করা যাবে না বলে দাবি করেছেন, ওয়াগনারের সাবেক যোদ্ধা মারাত গাবিদুলিন।

রুশ সাংবাদিক ফারিদা রাস্তামোভা বলেন, ‘পুতিনের অবস্থান আগের মতোই স্থির। তার নিরাপত্তা কৌশল, রাশিয়ায় নিজের শক্তি দেখাতে তিনি যেসব ব্যবহার করেন, সেগুলোর কোনো কিছুতে সামান্য পরিবর্তনও আসেনিএ কার্যত সব শান্তি প্রক্রিয়াই শুরু হয় যুদ্ধরতদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক কথোপকথনের মাধ্যমে, বিশেষ করে মানবিক ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে। এভাবেই বিশ্ব কাজ করে থাকে, সবসময় এভাবেই করে এসেছে। শুধুমাত্র কয়েকটি কারণে ইউক্রেনের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হচ্ছে না।