সিরিজ আগেই হাতছাড়া হয়ে গেছে। শেষ ওয়ানডেটি ছিল কেবল নিয়মরক্ষার, বাংলাদেশের জন্য হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর। লজ্জা এড়ানোর ম্যাচে ইংল্যান্ডকে অবশ্য নাকানি-চুবানিই খাইয়েছে তামিম ইকবালের দল।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ২৪৭ তাড়া করতে নামা ইংলিশদের ৪৩.১ ওভারে ১৯৬ রানেই গুটিয়ে দিয়েছে টাইগাররা। বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতেছে ৫০ রানে। তিন ম্যাচ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরে শেষ করেছে স্বাগতিকরা।
টস জিতে ব্যাটে নেমে আজ প্রথম দুই ম্যাচের মতো শুরুটা ভালো হয়নি টাইগারদের। দলীয় ১৭ রানের মাথায় দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের পঞ্চম বলেই শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ লিটন কুমার দাস। স্যাম কারানের বলে জস বাটলারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন এই ডানহাতি ব্যাটার। এরপর কারানের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে জেমস ভিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে ফিরেছেন তামিম ইকবাল। সাজঘরের পথ ধরার আগে ৬ বলে ১১ রান এসেছে টাইগার অধিনায়কের ব্যাট থেকে।
এরপর বিপদ সামাল দেন শান্ত ও মুশফিক। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ৯৮ রান। দলীয় ১১৫ রানের মাথায় শান্ত রান আউটে কাটা পড়লে ভাঙে জুটি। তার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৫৩ রান।
শান্ত ফিরলেও অন্য প্রান্তে মুশফিক ছিলেন অবিচল। নিজের রান খরা কাটিয়ে এদিন তিনি তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৪২তম অর্ধশতক। ৯০ বলে ৭০ রানে সাজঘরে ফেরেন মুশি। এরপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটি বাধেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে রিয়াদ ক্রিজে বেশিক্ষণ স্থায়ী হননি। ১০ রান করে ফেরেন তিনিও।
রিয়াদের বিদায়ের পর আফিফকে সঙ্গে দিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দুইশো ছাড়িয়ে নিয়ে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। দলীয় ২১২ রানের মাথায় তাদের ৪৯ রানের জুটি ভাঙে আফিফের ১৫ রান করে বিদায়ে। কিন্তু অপর প্রান্তে নিজের ক্যারিয়ারের ৫২তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন টাইগার পোষ্টারবয়।
মেহেদি মিরাজ ৫ ও তাইজুল ইসলাম ২ রান করে দ্রুত আউট হয়ে গেলেও সাবলীলভাবে ব্যাটিং করতে থাকেন সাকিব। তবে শেষদিকে দ্রুত রান তোলার প্রেক্ষিতে ইনিংস শেষ হওয়ার আগের ওভারে ৭১ বলে ৭৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন টাইগার অলরাউন্ডার। সাকিবের বিদায়ের পরের ৪৮.৪ ওভারে ২৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে পেসার জোফরা আর্চার একাই ৩ উইকেট শিকার করেন। আদিল রশিদ ও স্যাম কারান নেন ২টি করে উইকেট।
ইংল্যান্ডের কাছে এ লক্ষ্য মোটেও বড় ছিল না। অন্তত তাদের দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিং তাই বলছিল। ইংলিশদেও শুরুটাও হয় দারুণ। কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলে নেয় অর্ধশতক। তবে বিপত্তি বাধে নবম ওভারে।
সাকিব আল হাসানের বল রিয়াদের কাছে ক্যাচ তুলে দেন ফিলিপ সল্ট। দলীয় ৫৪ রানের মাথায় ২৫ বলে ৩৫ রানে ফেরেন সল্ট। এর পরের ওভারেই ডেভিড মালানকে ফেরান এবাদত হোসেন। রানের খাতাই খুলতে পারেননি এ ব্যাটার।
পরের ওভারেই আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জেসন রয়কে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান সাকিব। রয় ৩৩ বলে করেন ১৯ রান। মাত্র ১ রানে ৩ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড এরপর গড়ে তোলে প্রতিরোধ।
তবে সে প্রতিরোধ বেশিক্ষণ দীর্ঘ হয়নি মিরাজের কল্যাণে। দলীয় ১০৪ রানের মাথায় তিনি নিজের শিকার বানান স্যাম কারানকে। এরপর দ্রুত জেমস ভিন্স আর মঈন আলী ফিরলে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে বাংলাদশ।
তবে বাংলাদেশের জয়ের পথে কাটা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন অধিনায়ক জস বাটলার। দলীয় ৩৫তম ওভারে সে কাটা দূর করেন তাইজুল। তিনি ১৫৮ রানের মাথায় ফেরান ২৪ বলে ২৬ রান করা জস বাটলারকে।
এরপর ১৭৪ রানের মাথায় আদিল রশিদকে দ্বিতীয় শিকার বানান তাইজুল। নবম ওভার করতে এসে রেহান খানকে মিরাজের ক্যাচ বানান সাকিব। ১৯০ রানে ৯ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড শেষদিকে ক্রিস ওকসের ব্যাটে কেবল ব্যবধান কমাতে পেরেছে। শেষ পর্যন্ত ৪৩.১ ওভাওে ১৯৬ রানে অলআউট হয় তারা।
বাংলাদেশের হয়ে ১০ ওভারে ৩৫ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। দুইটি করে উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম ও এবাদত হোসেন।