বগুড়ায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ডেকে নিয়ে দুই অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্য করার ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করা হলেও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এ ঘটনায় আজ (সোমবার) ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (ভিএম স্কুল) সামনে গিয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ফেরৎ পাঠিয়ে দেন।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যন্ত সকলের কাছে সময় চান। প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত তিনি সকলকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। এসময় পর্যন্ত তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানান তিনি।
বিদ্যালয়ে ঝাড়ু দেওয়াকে কেন্দ্র করে বগুড়ার এক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে তার সহপাঠীদের ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছিল। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অভিযোগ, বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে ভিএম স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্ন করে থাকে। গত ২০শে মার্চ ওই বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল। তবে ওই শিক্ষার্থী নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। এনিয়ে তার সহপাঠীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ওই রাতে বিচারকের মেয়ে ফেসবুকে তার সহপাঠীদের নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেয়। ওই পোস্টে তার চার সহপাঠীরা পাল্টা উত্তর দেয়। এ নিয়ে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন পরদিন (মঙ্গলবার) বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে ওই চার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবককে ডেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকি দেন। সেখানে দুই অভিভাবককে পা ধরে তার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। রাতে জেলা প্রশাসক গিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। ঘটনা সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হলে গত ২৩শে মার্চ ওই বিচারককে বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
একই ঘটনায় বিচারক প্রত্যাহার হলেও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আবারও ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে। সোমবার (২৭শে মার্চ) বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের সামনে সমবেত হন। তারা সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শনের উদ্যোগ নিলে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন বিদ্যালয়ে যান। তিনি সমবেত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বিদ্যালয়ের ভেতরে যান। সেখানে তাদের সঙ্গে কথা বলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ফেরৎ পাঠিয়ে দেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার দিনই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তাদের তদন্ত কাজ শুরুও করেছে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তারা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিবেন। এই সময় পর্যন্ত আমি সকলকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।