দেশে প্রথমবার কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি সুতা দিয়ে বানানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শাড়ি। বান্দরবানে ভিন্ন ধরনের এই শাড়ি তৈরি করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন পাহাড়ী ক’জন নারী। জেলা প্রশাসনের এই প্রকল্পে কলাগাছের সুতা দিয়ে অন্যান্য সামগ্রী তৈরি হয়েছে আগেই। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় এবার শাড়ি তৈরির কাজ সফল হওয়ায় খুশি উদ্যোক্তারা। শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে শাড়ি তৈরির আশা করছেন তারা।

এই শাড়িটি দেখতে জামদানি শাড়ির মতো হলেও এটা সম্পূর্ণ নতুন এক উপাদানে বানানো হয়েছে। কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি সুতায় বোনা শাড়ি এটি, যা দেশে এই প্রথম।

দেশে প্রথমবার কলাগাছের আঁশে তৈরি হলো শাড়ি - banglanews24.com

কলাগাছ থেকে তৈরি সুতা দিয়ে ব্যাগ, জুতা, ফাইল, পাপোস, কলমদানিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি হচ্ছে বেশ আগে থেকেই। তবে এই সুতায় বান্দরবানে প্রথম তৈরি করা হয়েছে শাড়ি। বান্দরবানের জেলা প্রশাসন ও মহিলা অধিদপ্তরের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি সুতায় শাড়ি বুনন বেশ আলোড়ন ফেলেছে। মণিপুরী তাঁতশিল্পী রাধাবতী সাধারণ তাঁতে ১৫ দিনে এই শাড়িটি তৈরি করেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের বনজ সম্পদের ব্যবহার ও নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরির প্রশিক্ষণ পেয়ে খুশি উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষণার্থী।

শিগগিরই কলাগাছের সুতা দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে শাড়ি উৎপাদনের পরিকল্পনা আছে বলে জানালেন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া চৌধুরী।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজি বলেন, কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি হওয়ায় তাঁত শিল্পে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। এখন এটিকে বাণিজ্যিক করতে গবেষণা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, প্রথম তৈরি হওয়া শাড়িটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে প্রদান করা হবে।

কলাগাছের সুতা দিয়ে বোনা হলো 'কলাবতী' শাড়ি | প্রথম আলো

বান্দরবান শহরের কালাঘাটা মণিপুরী পল্লিতে প্রথম এই শাড়িটি তৈরি করেছেন রাধাবতী দেবী। তিনি বলেন, বান্দরবান জেলা প্রশাসক তাকে শাড়ি বানানোর জন্য নিয়ে যান। আগে কখনোই  বাংলাদেশে কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি হয়েছে এমনটি শোনা যায়নি। তবে ভারতে কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি হয়। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। এখন ভালো লাগছে। আমিই প্রথম কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি করেছি। প্রথম দিকে আঁশ থেকে সুতা তৈরি করা, সুতাগুলো প্রক্রিয়াকরণ করতে সময় লেগেছে আট দিন। শাড়ির কাপড় বুনতে লেগেছে সাত দিন। তবে আগামীতে সব জিনিসপত্র ঠিকঠাক থাকলে এক দিনেই একসঙ্গে মেশিনে তিনটি শাড়ি তৈরি করা যাবে। সাধারণ একটি শাড়ি বুনতে ৫০০ গ্রাম সুতা লাগলেও কলাগাছের আঁশের সুতায় প্রথম শাড়িটি বুনতে এক কেজির মতো সুতা লেগেছে। একটি শাড়ি তৈরিতে খরচ পড়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকার মতো। যখন আরো কম সময়ে এই শাড়ি বানানো যাবে তখন উৎপাদন খরচ আরো অনেক কমে আসবে।

কলাগাছের সুতা দিয়ে বোনা হলো 'কলাবতী' শাড়ি

বান্দরবান জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী বলেন, আমাদের একটি দীর্ঘ যাত্রা সফল হলো। তিনি বলেন, একটি কলাগাছ দিয়ে ২০০ গ্রাম সুতা হয়। সেই হিসেবে পাঁচটি কলাগাছ থেকে এক কেজি সুতা হয়। কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি বানানোর ফলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হব। প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগী বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইং সাইং উ বলেন, পাহাড়ের নারীদের কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিরসনে কলাগাছের সুতায় শাড়ি তৈরি ছিল এ প্রকল্পের বড় সফলতা। গুণমান ঠিক রেখে শিল্পটি সম্প্রসারণ করা গেলে পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা ফিরবে তিন পার্বত্য জেলায়।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লুত্ফর রহমান, কলাবতী শাড়ি তৈরির প্রশিক্ষক রাধাবতী দেবী, শিক্ষক সাইং সাইং উ ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আতিয়া চৌধুরী।