আরেকটি মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। মূল সেতু উদ্বোধনের ৯ মাস পর আজ মঙ্গলবার পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে পরীক্ষামূলক ট্রেন। গত বছরের জুনে পদ্মা সেতুর ওপর যান চলাচল শুরু হলে কারিগরি জটিলতায় পিছিয়ে যায় ট্রেন চলাচলের তারিখ। পরে মূল সেতুতে রেল লাইন বসানোর অনুমতি পাওয়া নিয়েও সেতু কর্তৃপক্ষের সাথে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের জটিলতা দেখা দেয়। আগস্টে অনুমতি পেলেও মূল সেতুতে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রেখে রেললাইন বসানো নিয়েও তৈরি হয় নতুন জটিলতা।
তবে সেসব জটিলতা কাটিয়ে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে মূল সেতুসহ সেতুর দুই পাড়ের উড়াল রেলপথে। এতদিন স্বল্প পরিসরে পরীক্ষামূলক বিশেষ ট্রেন চললেও মঙ্গলবার পুরো সেতু পাড়ি দেবে এই ট্রেন। এ লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে রওনা দিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া রেল স্টেশনে আসবে বিশেষ ট্রেনটি। এর মাধ্যমে সেতু চূড়ান্তভাবে ট্রেন চলাচলের উপযোগী কিনা কিংবা কোন বাধা আছে কিনা তা যাচাই করা হবে। রেলপথমন্ত্রী ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এই বিশেষ ট্রেনে পদ্মা পাড়ি দেবেন।
এদিন বিশেষ ট্রেন পরীক্ষমূলকভাবে চললেও যাত্রী নিয়ে চলতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে চলতি বছরের শেষদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে চলতে পারে যাত্রীবাহী ট্রেন।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর খবরে পদ্মা সেতুর দুই পারে আনন্দের জোয়ার শুরু হয়ে গেছে। প্রতিদিন বিকাল হলেই দুই পারের মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে যেমন সেতুর দুই পারের মানুষের উত্সাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে, তেমনি পদ্মা সেতুর রেলপথ চালুর বিষয়েও হাজার হাজার মানুষের মধ্যে উত্সবের আনন্দ বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে আবার জমবে মাওয়া ও ভাঙ্গা স্টেশন।
সেকশনভিত্তিক ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতুতে শতভাগ, মাওয়া-ভাঙ্গা অগ্রাধিকার অংশের অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৮৮ দশমিক ৫০ ভাগ। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৭০ ভাগ। ভাঙ্গা-যশোর সেকশনে নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৬২ ভাগ। ঢাকা-যশোর সেকশনে নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৭০ দশমিক ৫০ ভাগ। সব মিলিয়ে গত জানুয়ারি পর্যন্ত সার্বিক ক্রমপুঞ্জিত ভৌত অগ্রগতি শতকরা ৭০ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৬৭ দশমিক ২৫ ভাগ।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনসট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্টের (সিএসসি) তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এই রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘আগামী বছর প্রকল্পটি জুন-মাসের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। আমরা এরই মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত শতভাগ কাজ শেষ করেছি। রেলসংযোগ নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।’
পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘৪ এপ্রিল রেলমন্ত্রী আমাদের সময় দিয়েছেন বলে সেদিন আমরা গ্যাংকার দিয়ে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪১ কিলোমিটার রেলপথ পরীক্ষা করে দেখব। এ পথে ডিজাইন-স্পিড ১২০ কিলোমিটার থাকলেও ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে পরীক্ষামূলক টেস্ট চালানো হবে।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় রেল লিংক প্রকল্পের অধীনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)। এই প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর।