প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক ঘাত প্রতিঘাতের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছিলো তাদের কাছ থেকে এখন গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয় এটা দুর্ভাগ্যজনক। সোমবার (১০ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে আনা প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটা আমাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের ছবক দেয় আর আমাদের বিরোধী দল থেকে শুরু কিছু কিছু লোক তাদের কথায় খুব নাচন-কোঁদন করছেন, উঠ-বস করছেন, উৎফুল্ল হচ্ছেন।

বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে আবার দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষ হয়েই ওকালতি করে যাচ্ছে। গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে এখানে এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে- তার গণতান্ত্রিক কোনো অস্তিত্ব থাকবে না, অগণতান্ত্রিক ধারা। আর সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী, সামান্য কিছু পয়সার লোভে এদের তাঁবেদারি করে, পদলেহন করে’।

শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের মানুষের ভাগ্য ফেরানো সম্ভব হয়েছে। সংসদ নেতা বলেন, ২০২৬ সালে মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হবে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ’।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এসে কিছুই নাকি করেনি। এসময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এবং বিএনপির আমলে কী কী উন্নয়ন হয়েছে তার তুলনামূলক চিত্র বর্ণনা করেন।

ইতিহাস বিকৃতির কারণে দেশের অনেক প্রজন্ম স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল জাতীয় সংসদ। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পরে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় সংসদ নেতার বিশেষ অধিবেশনের প্রস্তাব।

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা বলেন, ‘১৫ আগস্টে যারা হত্যা করেছে, সেই খুনি রাশেদ (রাশেদ চৌধুরী) আমেরিকায় আশ্রয় নিয়ে আছে। সেখানে যতটা প্রেসিডেন্ট এসেছে সবার কাছে আমি আবেদন করেছি। আইনগতভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমরা ডিপলোমেসির মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়েছি। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি যে, এ খুনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাকে আপনারা আশ্রয় দেবেন না। শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, রাষ্ট্রপতির হত্যাকারী, মন্ত্রীর হত্যাকারী। এরা মানবতা লঙ্ঘনকারী। এদের আপনারা আশ্রয় দিয়েন না। ফেরত দেন। কই তারা তো তাকে ফেরত দিচ্ছে না? খুনিদের লালন-পালন করেই রেখে দিচ্ছে’।

তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা খুবই বিচিত্র। আমরা আইয়ুব আমল দেখেছি, ইয়াহিয়া আমল দেখেছি, জিয়ার আমল দেখেছি, জেনারেল এরশাদের আমল দেখেছি, খালেদা জিয়ার আমলও দেখেছি’।

এসময় যুক্তরাষ্ট্র সফরে একটি বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, আমেরিকায় যখন প্রথমবার যাই, সেখানকার আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে আমার মিটিং হয়েছিল। বলেছিলাম, আমি একটি মনুমেন্ট দেখে এসেছি। সেখানে লেখা আছে- গবর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল। আমি এমন একটি দেশ থেকে এসেছি, সেদেশটি হচ্ছে গবর্নমেন্ট অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য জেনারেল। বলেছিলাম, আমেরিকা গণতন্ত্র চর্চা করে তাদের আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত। এটা যখন পার হয়ে যায়, তখন কি আপনাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা বদলে যায়? কেন আপনারা একটা মিলিটারি ডিকটেরকে সমর্থন দিচ্ছেন? আমি এই প্রশ্নটি করেছিলাম।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদেরকে এখন গণতন্ত্রের জ্ঞান দিচ্ছে। কথায় কথায় ডেমোক্রেসি আর হিউম্যান রাইটসের কথা বলছে। তাদের দেশের অবস্থাটা কী? কয়েকদিন আগের কথা, আমেরিকার টেনেসিস রাজ্যে তিন জন কংগ্রেস ম্যান— এই তিন জনের অপরাধ হচ্ছে, তারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য আবেদন করেছিল। তারা ডেমোনেস্ট্রেশন দিয়েছিল যে, এভাবে যার তার হাতে অস্ত্র থাকা, আর এভাবে গুলি করে শিশুহত্যা বন্ধ করতে হবে। এটাই ছিল তাদের অপরাধ। আর এই অপরাধে দুই জনকে কংগ্রেস থেকে এক্সপেলড করা হয়। জাস্টিস জন ও জাস্টিস পিয়ারসন। একজন সাদা চামড়া ছিল বলে বেঁচে যান। তাদের অপরাধ হলো— তারা কালো চামড়া। সেই কারণে তাদের সিট আনসিট হয়ে যায়। তো এখানে মানবাধিকার কোথায়? এখানে গণতন্ত্র কোথায়? এটা আমরা প্রশ্ন।’

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। যে বিরোধী দলকে বড় বিরোধী দল বলা হয়, তারা ২০০৮ সালে ২৯টি সিট পেয়েছিল। তারা যদি এত বড়ই বিরোধী দল হয়ে থাকে, তাহলে ২৯টি সিট পেলো কেন? তারা এতবড় দল কোত্থেকে হয়ে গেলো। আর সাজাপ্রাপ্ত আসামি হচ্ছে সেই দলের চেয়ারপারসন। হত্যা-গুম-খুন-দুর্নীতি-জঙ্গিবাদ-সবকিছুতেই যারা পারদর্শী ছিল। তাদের জন্য দেশের মানুষ আতঙ্কে থাকতো। এখন তাদেরকে নিয়ে এত উৎফুল্লতা শুরু করছে। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য’।

এ সময় বিএনপি ও বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নের তুলনার চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপির আমলে ডিজিটাল-সেবা সেন্টার ছিল ৮টি, আর এখন এক হাজার ১৭৮টি। ওয়ান স্টপ সেন্টার আগে ২টি ছিল, এখন ৮ হাজার ৮২৫টি। বিএনপির আমলে সরকারি ওয়েবসাইট ছিল ৯৮টি। আর আওয়ামী লীগ আমলে ৫১ হাজার ৬৭৮টি’।