মাঝ আকাশে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইউম মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

সোমবার (৩০ আগস্ট) নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, দুপুরে কিংসওয়ে হাসপাতালের একটি সূত্র আমাকে ফোনে ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইউমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

মাহবুবুর রহমান বলেন, বেলা ১১টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

এর আগে নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে পৌঁছান সেখানে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউমের দুই বোন। তারা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ক্যাপ্টেন নওশাদকে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা চালু রাখার মত দেন।

অবস্থার অবনতি হলে গত রোববার তাকে হাসপাতালের সার্জিকেল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এসআইসিইউ) কোমায় নেওয়া হয়। হার্ট অ্যাটাকের পর তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। সেখানে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়।

গত শুক্রবার সকালে ওমানের মাস্কাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে বিজি-০২২ ফ্লাইটটি নিয়ে ঢাকা আসার পথে ভারতের আকাশে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ বোধ করেন। পরে ফ্লাইটটিকে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করানো হয়।

ওমানের রাজধানী মাস্কাট থেকে ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার পথে আসছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি। ভারতের রায়পুরের আকাশে থাকাকালে হুট করেই নিথর হয়ে পড়েন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। তখনই ককপিটের কন্ট্রোল নেন সঙ্গে থাকা ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম, ঘোষণা করেন মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি। ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ হওয়ার ২৫ মিনিটের মধ্যে নাগপুরের ড. বাবাসাহেব আম্বেদকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করেন উড়োজাহাজটি।

গত ২৭ আগস্ট বিজি ০২২ ফ্লাইটে থাকা এক ক্রু’র বর্ণনায় উঠে এসেছে সেদিনের ঘটনা। সেই ফ্লাইটে ১২৪ জন যাত্রী ছাড়াও দু’জন ককপিট ক্রু ও ছয় জন কেবিন ক্রু ছিলেন। সেই ফ্লাইটে থাকা  একজন কেবিন ক্রু  বলেন, হুট করেই ককপিট থেকে ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম জানালেন ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ককপিটে গিয়ে আমরা তার অবস্থা দেখে বুঝতে পারি- তিনি মারাত্মকভাবে হার্ট অ্যাটাক করেছেন। তার নিজের যে খারাপ লাগছে কিংবা অসুস্থ বোধ করছেন- এ কথা বলারও সুযোগ পাননি। তিনি পুরোই কলাপ্স করেছেন। অথচ আমরা ফ্লাইট শুরুর পর তাকে খাবার দিয়েছিলাম, তিনি সেই খাবার খেয়েছেনও।

সেদিনের কঠিন সেই মুহূর্ত বর্ণনা করে এই কেবিন ক্রু বলেন, ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে দ্রুত জরুরি অবতরণের জন্য কন্ট্রোল টাওয়ারে যোগাযোগ শুরু করেন। আর আমরা কেবিন ক্রুরা মেডিক্যাল ইমার্জেন্সের এসওপি অনুযায়ী কেবিনে কোনও চিকিৎসক আছে কি না জানতে চাই। কারণ উড়োজাহাজে থাকা মেডিক্যাল বক্স চিকিৎসকদের মাধ্যমে ব্যবহার করতে হয়। তবে দুর্ভাগ্যবশত ফ্লাইটে কোনও ডাক্তার না থাকায় আমরা নিজেরাই সেগুলো ব্যবহার করে ক্যাপ্টেন নওশাদকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে থাকি।

ঘটনার পর ২০-২৫ মিনিটে মতো শ্বাসরুদ্ধকর সময় পার করতে হয়েছে উল্লেখ করে সেই কেবিন ক্রু বলেন,ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম কলকাতা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। এটিসি থেকে নাগপুর এয়ারপোর্টে অবতরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আমার ফার্স্ট অফিসারকে সাহস যোগানোর চেষ্টা করেছি, তিনিও দৃঢ়ভাবেই ফ্লাইট অপারেট করেছেন। ফ্লাইটটি নাগপুরে অবতরণ জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। পরিস্থিতি যাত্রীদের জানানো হয়েছিল। তারাও ভালোভাবেই আমাদের সহযোগিতা করেছেন। আগে থেকেই বিমানবন্দরে অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত ছিল। রানওয়েতে নামামাত্র দ্রুত ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউমকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্স করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের ফ্লাইটে ১২৪ জন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই নিরাপদে ছিলেন। শুক্রবারই আরেকটি ফ্লাইটে করে আট সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল নাগপুরে যায়। মধ্যরাতের পর বিমানটিকে যাত্রীসহ ঢাকার বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়।

নওশাদ ও তার ফার্স্ট অফিসারের কারণে এবার জীবন রক্ষা পেয়েছে ওমান থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা ১২৪ যাত্রীর। তবে এটি প্রথম নয়। পাঁচ বছর আগে এভাবেই আরও ১৪৯ যাত্রী আর সাত ক্রু’র জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ।

পরে ২০১৭ সালে ক্যাপ্টেন নওশাদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসাপত্র পাঠায় আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ক্যাপ্টেন রন অ্যাবেল।