প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ছয় দফার প্রতি এ দেশের জনগণের অকুণ্ঠ জনসমর্থনে রচিত হয় স্বাধীনতার রূপরেখা। ছয় দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অঙ্কুরিত হয় স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ। বুধবার (৭ জুন) ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন নতুন মাত্রা পায়। বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা আদায়ের জন্য এদিন আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলিবর্ষণ করে। এতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, আবুল হোসেন, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন। আজকের এ দিনে আমি ঐতিহাসিক ৭ জুনসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের সব শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৬ সালের এ দিনে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে দিনটি অবিস্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির জন্য স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ডাকা জাতীয় সম্মেলনে পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। পরে বঙ্গবন্ধু ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে ছয় দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন এবং বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ছয় দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ছয় দফার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। ছয় দফা হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সনদ। ছয় দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন ও বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ মানুষ রাজপথে নেমে আসে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ছয় দফাভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ছয় দফাভিত্তিক ১১ দফা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় শুরু হয় ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। ছয় দফা কেবল বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ নয়, সারাবিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তি আন্দোলনের অনুপ্রেরণার উৎস।