আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি, আগামীতেও হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মানুষকে বোকা বানিয়ে এবার আর পার পাওয়া যাবে না বলেও জানান তিনি।
রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘চির অমর শহিদ জিয়া, জ্যোতির্ময় খালেদা জিয়া ও দীপ্তিমান তারেক রহমান’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস ইসলামের সভাপতিতে ও অধ্যাপক আবদুল হাসনাত মোহা. শামীমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, বিএনপি নেতা ফরহাদ হালিম ডোনার, ওবায়দুল ইসলাম, গ্রন্থের লেখক অধ্যাপক একেএম মতিনুর রহমান প্রমুখ।
ভিসানীতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আপনারাও ভিসানীতি করেন না দেখি। এটা ভিসানীতিরও প্রশ্ন না। প্রশ্ন হচ্ছে আপনার বিবেকের প্রশ্ন, জাতির বিবেকের প্রশ্ন। জনগনের কাছে একাউন্টেবল (জবাবদিহি) কিনা বলেন, এটাই যথেষ্ট। জনগন কি বলছে? ভোট দিতে পারছি না। জনগন কি বলছে, অত্যাচার হচ্ছে-নির্যাতন হচ্ছে, অন্যায়ভাবে ট্যাক্স আরোপ করে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। আদালতে ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না-এ বিষয়গুলো আমাদের আজকে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা নাকি বিদেশিদের কাছে যাই। আমরা বিদেশীদের কাছে যাই না, মাঝে মাঝে বিদেশীরা আমাদের ডাকে। তারা আমাদের কাছে জানতে চায়, দেশ কিভাবে চলছে, তোমরা কী বলতে চাও? যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাদের জানতে চাওয়া স্বাভাবিক। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নীতি হচ্ছে পৃথিবীতে তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। যেখানে গণতন্ত্র নেই; তাদের গণতান্ত্রিক সম্মেলনে তিনি ডাকেন না। তারা স্যাংশনসহ কী কী দেন। আমরা মনে করি, আমাদের জনগনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, মানুষের ভোটের অধিকার দেওয়া হচ্ছে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে বাকশাল করেছে। তখন ৩০ হাজার মানুষকে রক্ষীবাহিনী দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের দুঃশাসনে সেদিনও দুর্ভিক্ষ হয়েছে। মানুষকে খাবার দিতে পারেনি। এমন চুরি করেছে যে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তখন আওয়ামী লীগের নামটাই পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এখন আর আওয়ামী লীগ না বলে নিখিন বাংলা লুটপাট সমিতি নাম দাও। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
মির্জা ফখরুল বলেন, সোকল্ড ডেমোক্রেসি, সোকল্ড নির্বাচনের কথা বলে ১৪-১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের ওপর স্টিম রোলার চালাচ্ছে । এখন নতুন ধোয়া তুলেছে- তা উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এবং গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে তাদের নাকি থাকা উচিত। উন্নয়ন কোনটা- উড়াল সেঁতু, টানেল, নিউক্লিয়ার পাওয়ার, মেট্রোরেল-এসবই উন্নয়ন? মানুষের যদি জীবনযাত্রার মান উন্নত না হয়, তার খাদ্য নিরাপত্তা যদি না থাকে, তার আয়ের পথ যদি নিশ্চিত না হয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হয়; সেটাকে কোথা থেকে উন্নয়ন বলব? আজকে দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, পত্রপাত্রিকা নিয়ন্ত্রিত হলেও অনেক কথা মাঝে মাঝে লিখে ফেলে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশের মানুষ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। ২০১৪ সালে কোন নির্বাচনটা হয়েছিল? আবার বললে রেগে যান। আপনারা বলেন, আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে। কথাটা তো আমার না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে- ছবিতে এসেছিল কেন্দ্রে কোনো মানুষ নেই, ভোটার নেই; শুধু কুকুর আছে। ওই জন্য প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান বলেছিলেন কুত্তা মার্কা নির্বাচন। আমি শুধু তা রিপিট করেছি। সংবিধানে তিনটি অনুচ্ছেদ আছে- কোনো সমালোচনা করা যাবে না, কথাও বলা যাবে না। এমনকি পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করল যেটা যেখানে কেয়ারটেকার ছিল, সেখানেও বলা আছে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। চিন্তা করতে পারেন? দাবি করে তারা (আওয়ামী লীগ) গণতান্ত্রিক দল, গণতান্ত্রিক সরকার আমার কথা হচ্ছে আমি প্রতিবাদ করব, তোমার সঙ্গে একমত হবো না-এটা তো গণতন্ত্রের প্রথম কথা। একবার দু’বার বোকা বানাতে পারো, বারবার বোকা বানাতে পারবে না। এবার মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে।