পদ্মা, মেঘনা ও যমুনাসহ দেশের বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি এখন বিপৎসীমার খুব কাছাকাছি। উজানের ঢলে উত্তরের বেশ কয়েকটি নদীর পানিতে নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকা ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যার শঙ্কা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে প্লাবিত এলাকার পরিসর বাড়ছে।
এদিকে কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে প্লাবিত এলাকার পরিসর বাড়ছে। দুধকুমার নদের পানি বুধবার রাতে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। যদি বৃহস্পতিবার সকালে আবার কিছুটা নেমেছে। এই এলাকায় প্রতিদিন বাড়ছে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নদ-নদী আববাহিকার সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন। ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার অববাহিকার অনেক পরিবারের বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তবে এখনও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। তীব্র স্রোতে পানি লোকালয়ে ঢুকে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে তেলিয়ানীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর দিয়ে দুধকুমারের পানি লোকালয়ে ঢুকতে থাকে। একসময় স্রোতের তীব্রতায় ভেঙে যায় প্রায় ২৫০ মিটার বাঁধ। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। প্লাবিত করেছে বামনডাঙ্গার তেলিয়ানী, মালিয়ানীসহ প্রায় ১০টি গ্রাম।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বুধবার রাতে দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল, কিন্তু সকালে আবার কিছুটা নেমে গেছে। এখানে যে ৫টি নদ-নদী রয়েছে, তার সবগুলোতেই পানি বিপৎসীমার খুব কাছাকাছি আছে। আমাদের এখানে মূলত ২৫ কিলোমিটার এলাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ৪ কিলোমিটার এলাকা আমরা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছি। তবে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র যে তথ্য আমাদের দিয়েছে সেখানে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বড় বন্যার কোন আশঙ্কা নেই। সতর্কীকরণ কেন্দ্র আমাদের আগাম ১৫ দিনের রিপোর্ট দেয়। তবে স্বাভাবিক বন্যাতেও নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। সেভাবে এখানে কিছু মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন।
কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বুধবার সন্ধ্যা ৬টার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা স্পর্শ করেছে। এই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে আগামী দুই তিন দিন এটা একটু বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে বর্তমান বৃষ্টির পরিস্থিতির হিসেব করে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা মনে করছেন যে, এই বন্যা খুব বেশি স্থায়ী হবে না। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরাঞ্চলের ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তিস্তা নদীর পানি স্বল্প সময়ের জন্য ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে উত্তরাঞ্চলে মাঝারি বা তীব্র মানের বন্যার আশঙ্কা নেই। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতির পথে। বৃষ্টিপাত কমে আসায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির পথে। এ অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি বুধবার বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছিল।
বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নদ-নদী করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীর পানিও বাড়ছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। একই সঙ্গে চরাঞ্চলের ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রণজিত কুমার সরকার জানান, উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারি বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন ধরে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। এ কারণে চরাঞ্চলের নিম্নভূমিগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। আরো দুই-তিন দিন নদীতে পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।