পবিত্র ঈদুল আজহা রাত পোহালেই। এ ঈদ সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাটগুলো। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্রেতাদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে প্রতিটি পশুর হাট। চলছে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা। বুধবার (২৮ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, কম বেশি দামের তোয়াক্কা না করেই গরু কিনছেন ক্রেতারা।
মেরাদিয়া হাটে গরু, ছাগল ও বেড়া উঠেছে পর্যাপ্ত। কয়েক দিনে অর্ধেক গরু বিক্রি হয়েছে। গতকাল বেচাকেনা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সরকারি ছুটি থাকায় সকাল থেকে হাটে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তা ছিল কর্দমাক্ত। তবে সব উপেক্ষা করে ক্রেতাদের ভিড় ছিল হাটে।
দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা মো. ইজাজ হোসেন সকালে গরু কিনতে এসেছেন এ হাটে। তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, কয়েকটি গরু দেখেছি। এর আগে দরদাম না বনায় কেনা হয়নি। এখন কিনলাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়। গরুটা কিনে বাজার অনুযায়ী মনে হয় জিতেছি।
এ হাটে ঝিনাইদহ থেকে ১৮টি গরু নিয়ে এসেছেন মো. সাইফুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১৩টি বিক্রি হয়ে গেছে। গরুগুলো ১ লাখ থেকে ২ লাখের মধ্যে ছিল। মাঝারি গরু হওয়ায় বিক্রি হয়ে গেছে। আর পাঁচটি গরু আছে। এর মধ্যে দুটা বড়। দরদাম হচ্ছে, আশা করি রাতের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।
একই অবস্থা আফতাবনগর হাটেও। এ হাটেও মাঝারি গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। এসব গরুর দাম এক থেকে দেড় লাখ টাকা। হাটে এখনো গরু আসছে। কিছু বড় গরু উঠেছে। সেগুলোর দাম চড়া।
কুষ্টিয়া থেকে আসা বেপারী ওবায়দুল জানালেন, তিনি এর আগে বড় গরু নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু বিক্রি করতে পারেননি। এবার ১২টি মাঝারি গরু নিয়ে এসেছেন। মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি, আটটি বিক্রি হয়ে গেছে।
সাঈদনগর পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর অন্যতম বড় এ হাটে শেষ মুহূর্তে কোরবানি পশুর বেচাকেনার ধূম পড়েছে। সেখানে কথা হয় গরু ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে। ঝিনাইদহ থেকে আসা রাশেদুল বলেন, তিনি ১৪টি গরু এনেছেন। আগের দুই দিনে আটটি গরু বিক্রি করেছেন। গতকাল দুপুরের মধ্যেই তিনটি গরু বিক্রি করেছেন। কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও রাতের মধ্যে বাকি তিনটা বিক্রি করতে চাইলেন তিনি।
উত্তর বাড্ডা থেকে এ হাটে গরু কিনতে এসেছেন মারুফুল আলম। তিনি জানান, মাঝারি সাইজের গরু কিনতে এসেছি। বাজেট ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে। কোরবানির গরু নিয়েই বাসায় ফিরতে চাইলেন তিনি।
পুরান ঢাকার পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ধোলাইখাল ও পোস্তগোলা শশ্মানঘাটের পশুর হাটে গরু কেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। সকাল থেকেই জমে ওঠে হাটগুলো। রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে শুরু করে মুরগীটোলা পর্যন্ত ক্রেতাদের পুরোদস্তুরে আনাগোনা ছিল। অনেকেই গরু কিনে গরুর গলায় মালা পরিয়ে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে কেনা শেষে হাসিল দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নান্টু মিয়া বলেন, আমি সবসময় দুটো গরু কোরবানি দেই। গত কাল রাতে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটা গরু কিনেছি। আজকেও একটা কিনতে এসেছি। হাটের অবস্থা জানি না। আমরা প্রতি বছর মহল্লার যারা কোরবানি দেই তারা সবাই অলরেডি গরু কিনে ফেলছে। বাকিরাও আজ কিনে নেবে। আগে গরু নিয়ে রাখার বেশ সমস্যা হয়। এজন্য সবসময় শেষ মুহূর্তে হাট থেকে গরু কিনি।
যাত্রাবাড়ীর পশুর হাটের একজন ক্রেতা বলেন, ভেবেছি শেষ মুহূর্তে দাম কিছুটা কমবে, কিন্তু না কমেনি। ব্যাপারীরা বলছে গরু না বিক্রি করতে পারলে নিয়ে যাবে, তবুও কম দামে বিক্রি করবো না। আর অপেক্ষা করা সম্ভব না। আমি অনেক দেখে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে একটা কিনেছি। আজ তো কেনার শেষ সময়। না কিনে কী করবো। দাম বেশি কম জানি না। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি দিচ্ছি।
হাটগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে গরুর দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। রামপুরার বাসিন্দা আবদুল করিম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন হাটে গরু দেখেছি। পছন্দ অনুযায়ী দাম না মেলায় এই (মেরাদিয়া) হাটে এসেছি। এক দিন পর ঈদ। এককভাবে কোরবানি দেব, ছোট বা মাঝারি সাইজের গরু কিনব। বড় গরুর দাম কিছুটা কম মনে হলেও ছোট গরুর দাম একই রয়েছে।
অন্যদিকে বিক্রেতাদের দাবি ক্রেতারা দাম কম বলছেন। কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী হানিফ মিয়া বলেন, ‘সকাল থেকে বাজারের অবস্থা ভালো না। ক্রেতারা অর্ধেক দাম বলছেন। আমার ৩ লাখ টাকার গুরুর দাম তারা দেড় লাখের বেশি বলছেন না। গতকালও এটার দাম ২ লাখ টাকা উঠেছিল। অর্ধেক দামে বিক্রি করলে অনেক লস হবে।