আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ-আরপিও সংশোধন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার (৬ই জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে সরকার। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করে ক্ষমতাকে স্থায়ী করার নীলনকশা করছে। মূলত, আজ্ঞাবহ ইসি তাদের পুনরায় নির্বাচিত করার একটি মেশিন।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকারি নেতাদের সংলাপ নিয়ে ক্ষীণস্বর কর্পূরের মতো। তাদের সংলাপের কথা মাটিতে পড়ার আগেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। সংলাপ নিয়ে আওয়ামী নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে তারা জাতীয় তামাশার মুখপাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন জনগণের কাছে। জাতির সঙ্গে তামাশা করাটাই আওয়ামী লীগের ‘পপুলার সংস্কৃতি’।
রিজভী আরও বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথা শুনলেই শাসকগোষ্ঠীর ক্রোধবহ্নি জ্বলতে থাকে। অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পুনর্প্রবর্তনই হবে সংলাপ বা যে কোন আলোচনার মূল ভিত্তি বা এজেন্ডা। কারণ তারা দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, পুরো ভোট বাতিলের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী বিল পাস করেছে এমপিরা। নিজের স্বাধীনতাকে ‘বিক্রি করে দিয়ে’ নির্বাচন কমিশন যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের কারণে চলমান নির্বাচন বাতিলের যে ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ছিল, তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, আগে মনোনয়নপত্র দাখিলের ন্যূনতম সাত দিন আগে ক্ষুদ্রঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের বিধান ছিল। এখন দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, ঋণ খেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত তা পরিশোধের বিধান করা হয়েছে। এটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান। দেশি-বিদেশি সব মহলের পক্ষ থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জোর দাবি উঠেছে। সেখানে নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সরকার একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে গেল।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমলারা এখন আইনবিধি কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না। ক্ষমতার মায়া হরিণের পিছে দৌঁড়াতে গিয়ে তারা নীতি, নৈতিকতা এবং রাষ্ট্রের আইনকে পদদলিত করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে সরাসরি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে হামলা ও মামলার বিবরণী তুলে ধরা হয়। এছাড়া নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এ সময় জানানো হয়, গত দেড় মাসে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২২৫টি মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮৬৫ জন। আসামি করা হয়েছে ১০ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, খান রবিউল ইসলাম প্রমুখ।