প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ যতদিন সরকারে ছিল রংপুরে কখনও মঙ্গা হয়নি। খাদ্যের অভাব দেখা দেয়নি। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে ও নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।
বুধবার রংপুর জেলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে লুটপাট আর বাইরে থাকলে কেবল জ্বালাও পোড়াও করে।
রংপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল স্লোগানে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন জেলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় জনসভায়। দলীয় নেতা কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আগমনে দুপুরের আগেই কানায় কানায় ভরে যায় মাঠ। অনেকেই মাঠে জায়গা না পেয়ে আশ্রয় নেন মাঠের আশপাশের সব সড়কে। জনসমুদ্রে পরিণত হয় গোটা রংপুর শহর।
বেলা সাড়ে তিনটায় জেলা স্কুল মাঠের জনসভা স্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিপুল করতালিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান উচ্ছ্বসিত জনতা। তাদের অভিবাদনের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় দারিদ্রের কারণে পিছিয়ে পড়া রংপুরের উন্নয়নের কারণে মঙ্গা বিদায় নিয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে ও সংরক্ষণেও রংপুর এগিয়েছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নেরও প্রতিশ্র“তি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গোটা দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমারা প্রত্যেক এলাকায় উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। নারীদের জন্য কাজের সুবিধা করে দিয়েছি। আমাদের কাজের লক্ষ্য দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নতি করা। এ অঞ্চলে জীবনেও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না, মঙ্গা দেখা দেবে না। বাংলাদেশে কোনো ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তায়নও করব।
সরকার প্রধান বলেন, সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। কয়লার দাম ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে কয়েক দিন কষ্ট হয়েছে। এরপর এখন ঠিক হয়ে গেছে। বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

তিনি বলেন, আমি খালি হাতে আসিনি। আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি, যাতে প্রত্যেকটা উন্নয়ন তরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিলে উন্নয়ন হয়, মানুষের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন হয়। একমাত্র নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলেই মানুষের উন্নতি হয়। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও আমাদেরকে কাজের সুযোগ করে দেবেন সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ২০৪১ সালে মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নত দেশ রেখে যাব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বা, মা, ভাই হারিয়েছি, আমার হারাবার কিছু নেই। বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার আমার সংসার। জনগণের জন্যই কাজ করে যেতে চাই।

এর আগে দুপুর ২টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রংপুর সেনানিবাস হেলিপ্যাডে পৌঁছায়। এরপর সড়কপথে সার্কিট হাউজে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সভায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

এর আগে দুপুর সোয়া ১২টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জনসভার কার্যক্রম। রংপুরের ঐতিহাসিক জিলা স্কুল মাঠ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে যায়। মাঠ ছাড়িয়ে প্রধান সড়কের দুদিকে অবস্থান নেন বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। নানা রঙের পোশাক আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে গান গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনী জনসভা করেন। এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।