বাঙালির বেদনাবিধূর শোকের দিন ১৫ই আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে কতিপয় সেনাসদস্য সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পরিবারের শিশুসহ সবাইকে একসাথে হত্যার এমন নৃশংস ও জঘন্য নজির ইতিহাসে বিরল। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও বঙ্গবন্ধু কখোনোই বিশ্বাস করতেন না তাকে নিজ দেশের কেউ হত্যা করতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব দেয়ার অসাধারণ গুণ বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলো মুক্তির আকাঙ্খায়। পাকিস্তানের শৃঙ্খল ভেঙ্গে তাঁর নেতৃত্বে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠের ডাক নিরস্ত্র বাঙালিকে তুমুল প্রতিরোধ গড়তে উৎসাহ যুগিয়েছিলো সেসময়ের অন্যতম শক্তিশালী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।

পাকিস্তানের শাসকরা মুক্তিযুদ্ধের আগে ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাঁকে হত্যার বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলো। দেশ স্বাধীনের পরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে সেই কাজটিই একদল বিপথগামী সেনাসদস্য। যে দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবনের পুরোটা সময় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন সেই নিজ দেশে স্বাধীনতার স্থপতিকেই সপরিবারে হত্যা করে। দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবদুল মান্নান মনে করেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের জানা উচিৎ।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুিক্তযুদ্ধের মূল চেতনা থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিলো। সাম্প্রদায়িকতার সেই ধকল এখনো কাটিয়ে উঠেনি বলেই মনে করেন তিনি।

এই রাজনীতি বিশ্লেষক মনে করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলেও তাঁর আদর্শ বেঁচে থাকবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর সংগ্রাম মুক্তিকামী জনতার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে চিরকাল।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে জাতির পিতার পরিবারের সদস্য ও অন্য শহিদদের কবরে প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক এবং ফলের পাঁপড়ি অর্পণের পর ফাতেহাপাঠ ও মোনাজাত করা হবে।

দুপুর পৌনে ১২টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার ছাড়াও সমাধি কমপ্লেক্সে ফাতেহাপাঠ ও মোনাজাত করা হবে। শোক দিবসে সারা দেশের মসজিদে বাদ জোহর বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন।

সকাল সাড়ে ৬টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহাপাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল।

বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহাপাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। কর্মসূচিতে দলের প্রতিনিধিদল, গোপালগঞ্জ জেলা ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

বাদ জোহর কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসাবে বেলা ১১টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে (৩/৭-এ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০) বিশেষ প্রার্থনা, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং বেলা ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করবে।

দুপুরে সারা দেশে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও গণভোজের আয়োজন রয়েছে। বাদ আসর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে মহিলা আওয়ামী লীগ।

এছাড়াও ১৬ আগস্ট বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।