ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটি রাসায়নিক কারখানায় আগুন লেগে একই পরিবারের ৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। আজ মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে কেরানীগঞ্জের গদারবাগ এলাকায় এ আগুনের ঘটনা ঘটে। কারখানা থেকে আগুনের ফুলকি আশেপাশের অন্তত ৫টি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
নিহতরা হলেন— জিয়াসমিন আক্তার (৩৫), তার মেয়ে এশা আক্তার (১৪), এশার চাচা সোহাগ (২৫), সোহাগের স্ত্রী নিনা বেগম ও তাদের দেড় বছরের কন্যা তাইয়েবা।
সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে কেরানীগঞ্জের কালিন্দী গদারবাগ এলাকায় হাজী আবুল হাসনাতের মালিকানাধীন বাড়িতে স্বাদ গ্লাস অ্যান্ড পলিমার কারখানার রাসায়নিক গুদামঘরে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ঘুমন্ত শিশুসহ চারজন ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সবশেষ জেসমিন আক্তার নামের ৫০ বছর বয়সী নারীকে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, কেরানীগঞ্জের গদারবাগ এলাকার ওই গোডাউনে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায় ভোর ৪টার দিকে। অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে প্রথম ইউনিট পৌঁছে।
এদিকে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সোহাগ ও মিলনের বাবা হানিফ মিয়া। কথা বলতে গিয়ে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন তিনি। হানিফ বলেন, ‘অহন আমি কাগো নিয়া বাঁচুম? আরেক নাতনি তানহা হাসপাতালে ভর্তি। তারও অবস্থা বেশি ভালো না।’
গুদাম থেকে তিন গজ দূরত্বে চারটি আধা পাকা ঘর। ঘরগুলোয় তিনটি পরিবারের বসবাস। আর রাসায়নিকের গুদামটি টিনশেডের।
স্থানীয় লোকজন জানান, গুদামে বিস্ফোরণে পাশের ঘরগুলোতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ঘটনাস্থলেই চারজন মারা যান। আহত হন আরও দুজন। স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘরের দেয়াল ভেঙে হতাহতদের উদ্ধার করেন।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কেরানীগঞ্জ স্টেশনের ওয়্যারহাউস পরিদর্শক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘ঘটনাস্থলে জুতা ও কলমের কালি জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য পাওয়া গেছে। আগুন লেগেছিল রাত ৩টার পরে। আমরা আগুনের সংবাদ পাই ভোর ৪টার দিকে।
‘কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এবং পরে সদরঘাট ফায়ার সার্ভিস ও ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে প্রায় ছয়টি ইউনিট এসে ২ ঘণ্টার চেষ্টায় ভোর ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনে।’
মোহাম্মদ হানিফ আরও বলেন, ‘এই রাসায়নিক গুদামের মালিকের নাম মো. টুটুল মিয়া। তিনি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা এলাকার বাসিন্দা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই রাসায়নিক গুদাম পরিচালনার কোনো অনুমোদন ছিল না। অবৈধভাবে টুটুল মিয়া এখানে রাসায়নিক দ্রব্য মজুত করে রেখেছিলেন।’