রাশিয়ার সমর্থিত সংগঠন ওয়াগনারকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে ঘোষণা করবে যুক্তরাজ্য সরকার। যার দ্বারা এই সংস্থার সদস্য বা সমর্থন করা অবৈধ হবে। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান বলেছেন, ওয়াগনার ভ্লাদিমির পুতিনের একটি সামরিক হাতিয়ার’। ইউক্রেন এবং আফ্রিকায় এর কাজ ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি’।
তিনি বলেন, ‘ওয়াগনারের অব্যাহত অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ড ক্রেমলিনের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্য অব্যাহত রয়েছে। তারা সন্ত্রাসী- এই নিষেধাজ্ঞার আদেশটি যুক্তরাজ্যের আইনে এটি পরিষ্কার করে।’
বুধবারই এসংক্রান্ত বিল পার্লামেন্টে পেশ হওয়ার কথা। পার্লামেন্টে এটা পাস হয়ে যাবে বলেও মনে করা হচ্ছে। বিলে বলা হয়েছে, ওয়াগনার বাহিনী লুট, হত্যা এবং অত্যাচারের সঙ্গে যুক্ত। ইউক্রেন এবং আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়েছে। এ কারণেই সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করতে চায় যুক্তরাজ্য।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বলেছেন, ‘ওয়াগনার বাহিনী হিংসাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক… রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি সামরিক হাতিয়ার।’ তিনি আরো বলেন, ‘ইউক্রেন এবং আফ্রিকায় এদের কাজ বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’ স্বরাষ্ট্রসচিব সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান বলেন, ‘ওয়াগনার এমন অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে শুধু ক্রেমলিনের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে।
তারা সন্ত্রাসী এবং এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের আইনে তা পরিষ্কার করা হবে।’ওয়াগনার বাহিনী ইউক্রেন যুদ্ধে আগ্রাসনের পাশাপাশি সিরিয়া, লিবিয়া, মালিসহ আফ্রিকার দেশগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের নাগরিকদের হত্যা, নির্যাতনসহ একাধিক অপরাধের অভিযোগও রয়েছে। এই বছরের শুরুতে গোষ্ঠীটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। যখন ভাড়াটে বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন রুশ সামরিক নেতাদের বিরুদ্ধে একটি ব্যর্থ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
প্রিগোজিন ২০১৪ সালে এই গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চলতি বছরের ২৩ আগস্ট কয়েকজন ওয়াগনার সদস্যসহ সন্দেহজনক বিমান দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। প্রিগোজিনকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে সমাহিত করা হয়েছে। গ্রুপটির নাম এখন যুক্তরাজ্যের অন্যান্য নিষিদ্ধ সংগঠন যেমন হামাস এবং বোকো হারামের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
যদি স্বরাষ্ট্রসচিব মনে করেন, কোনো সংগঠন সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত, তবে যুক্তরাজ্যের ‘সন্ত্রাস আইন ২০০০’ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্রসচিব ওই সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারবেন। এই আইনে আগে শুধু উত্তর আয়ারল্যান্ডে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব ছিল।
নিষেধাজ্ঞার পর কেউ যদি দলটিকে সমর্থন করে, তবে তা একটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। এর মধ্যে আছে, সংগঠনের কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বৈঠকের আয়োজন করা, সংগঠনের লক্ষ্য সমর্থন করা এবং এর পতাকা বা লোগো প্রদর্শন করা। এই ধরনের অপরাধের জন্য ১৪ বছরের জেল বা পাঁচ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। ওয়াগনারগোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করার জন্য যুক্তরাজ্যের সরকার কয়েক মাস ধরে সংসদ সদস্যদের চাপের মুখে ছিলেন।