জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন সদস্য দেশগুলোর নেতারা। তাদের মতৈক্যের পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত হয়েছে ‘নয়াদিল্লি ঘোষণা’। গতকাল শনিবার ভারতের নয়াদিল্লিতে শুরু হয়েছে জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেল, যা আজ রোববার শেষ হবে। এবারের সম্মেলনে এমন ঐকমত্য সবার জন্যই বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা মারাত্মক দুরূহ হয়ে উঠেছিল। এনডিটিভি ও ডয়েচে ভেলে।

ঘোষণাপত্রে একাধিক বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। যেমন ‘সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট’ বা টেকসই উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। সেই সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়টি নিয়েও বেশ কিছু লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য-সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে।

পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার বা তা ব্যবহারের হুমকি দেয়াকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখিত হয়েছে। এই বিষয়ে ঘোষণাপত্রে লেখা হয়েছে, ‘আমরা সব রাষ্ট্রকে আঞ্চলিক অখÐতা ও সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাসহ আন্তর্জাতিক আইনের নীতিগুলো বজায় রাখার আহ্বান জানাই।’

নয়াদিল্লি ঘোষণার প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এই একমাত্র পৃথিবীতে আমরা একটি পরিবার এবং আমাদের ভবিষ্যৎও একই। প্রস্তাবনা অনুসারে এবারের জি-২০ সম্মেলনের থিম ছিল ‘বাসুধৈব কুটুম্বাকম’ বা ‘বাসুদেবের পরিবার’। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, বাসুদেব দেবতাদের পিতা এবং তাঁর থেকেই মানবজাতির সূত্রপাত।

এই ঘোষণায় মোট ১০টি দফার কথা বলা হয়েছে। প্রথমেই বৈশ্বিক অর্থনীতির শক্তিশালী, টেকসই, ভারসাম্যপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার কথা বলা হয়েছে। টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ‘গ্রিন ডেভেলপমেন্ট প্যাক্টের’ কথা বলা হয়েছে তৃতীয় দফায়। এই দফার মূলত কথা পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করে উন্নয়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে, ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বহুপক্ষীয় বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে বহুপক্ষীয় ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ঋণের বোঝা নিয়ে নতুন করে ভাবার আহ্বান জানানো হয়েছে এই দফায়।

পঞ্চম দফায় প্রযুক্তিগত রূপান্তর এবং ডিজিটাল জন-অবকাঠামোর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এই দফায় ডিজিটাল অবকাঠামো এমনভাবে গড়ে তোলার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে যেখানে সাধারণ জনগণ উপকৃত হবে এবং তাদের অধিকার, তথ্য সুরক্ষিত থাকবে। পাশাপাশি তাদের তথ্যের অধিকারও নিশ্চিত হবে। এই দফায় ডিজিটাল অর্থনীতির বিষয়ে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরির বিষয়টি এসেছে। ক্রিপ্টো বাণিজ্যেও প্রয়োজনীয় নতুন নীতিমালা ও বিধিবিধানের কথা বলা হয়েছে এই দফায়। এ ছাড়া, ডিজিটাল ইকোসিস্টেমকে উৎসাহিত করা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডিজিটাল মুদ্রায় লেনদেন এবং সবার কল্যাণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার কথা বলা হয়েছে।

ষষ্ঠ দফায় বলা হয়েছে, ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী উপযুক্ত, ন্যায্য, টেকসই ও আধুনিক আন্তর্জাতিক কর ব্যবস্থার প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে জি-২০ভুক্ত দেশগুলো। সপ্তম দফায় লিঙ্গ সমতা, নারী ও কন্যাশিশুদের মৌলিক গুরুত্ব এবং সব নারীর ক্ষমতায়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জি-২০ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে বলেও দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন জোটের নেতারা।

অষ্টম দফায় বৈশ্বিক অর্থনীতির বিভিন্ন ইস্যু বিশেষ করে আসন্ন সংকট মোকাবিলায় একযোগে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও অর্থপাচার রোধে একযোগে কাজ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে নবম দফায়। শেষ দফায় আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি বিশ্ব গড়ার ব্যাপারে জি-২০ভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।