চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো যাবে না বলে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রস্তাবের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় এই মতামত দিয়েছে। আজ রোববার (পহেলা অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।
মন্ত্রণালয় জানায়, বিদেশ যেতে হলে খালেদা জিয়াকে জেলে গিয়ে পরে আদালতে আবেদন করতে হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদনের বিবেচনার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছিল তার প্রেক্ষিতে সরকার ৪০১ ধারা অনুযায়ী তাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এই আবেদনটি একবার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এটি নিয়ে দ্বিতীয়বার আর কোনো কথা বলার সুযোগ নেই।
এর আগে, এদিন সকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে মতামত দিয়েছেন, তা-ই আইনের অবস্থান এবং সেটিই ঠিক।
তিনি বলেন, আইনগতভাবে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। দেশের সব কাজই আইনের মাধ্যমে করতে হয়। নির্বাহী আদেশে বিদেশ গেলেও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সেই নির্বাহী আদেশ দিতে হবে। আইনের বাইরে কোনো নির্বাহী আদেশ হতে পারে না।
আনিসুল হক বলেন, আপনারা জানেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনি মতামতের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার ভাইয়ের যে সর্বশেষ দরখাস্ত, সেখানে বলা হয়েছে তাকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দেওয়ার জন্য এবং তাকে বিদেশ পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার জন্য। সে বিষয়ে আইনি মতামতের জন্য আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। আমরা আইনি মতামত দিয়ে কিছুক্ষণ আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।
কী মতামত দেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে তিনি বলেন, প্রথম কথা হলো, প্রথম যে দরখাস্তটা ছিল, সেটি ২০২০ সালের মার্চ মাসে নিষ্পত্তি হয়। সেখানে বলা হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা যেন করা হয়। সেই দরখাস্তের ওপর আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দুটি শর্তে তার দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিলো। এটি ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারার উপধারা ১ এর ক্ষমতাবলে। শর্ত দুটি হলো- তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। সেই শর্ত মেনে তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হন এবং বাসায় তিনি যান। সেভাবেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, নিষ্পত্তি করার পর দরখাস্তের মধ্যে এইটুকু জিনিস উন্মুক্ত ছিল যে, তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল ছয় মাসের জন্য এবং প্রত্যেক ছয় মাসে বাড়ানো যাবে কি না, সে বিষয়ও ছিল। প্রত্যেক ছয় মাসে তা বাড়িয়ে এ পর্যন্ত আটবার বাড়ানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো অবকাশ আইনে থাকে না।
এর আগে, ২৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড শর্তযুক্তভাবে স্থগিত করা হয়। পরিবর্তন করতে হলে বেগম খালেদা জিয়ার শর্তযুক্ত মুক্তি বাতিল করে সহাবস্থানে আনতে হবে। এরপর আবার অন্য বিবেচনা করা যাবে। তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই।
২৪ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা দেওয়া নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী বলতে পারবেন এ বিষয়ে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করতে হয়। সে আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ওপর নির্ভর করে।
তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি। বেগম খালেদা জিয়াকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা ১ এর ক্ষমতাবলে শর্তযুক্তভাবে সাজা স্থগিত হয়েছে এবং মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায়। এখন আইনের যে পরিস্থিতি, তাতে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয় তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার যে আগের শর্তযুক্ত মুক্তি, তা বাতিল করতে হবে। বাতিল করে সহাবস্থানে যাওয়ার পর অন্য বিবেচনা করা যাবে। আমার মনে হয়, আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে কারাবন্দি হন তিনি। পরে হাইকোর্টে এ সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আরও সাত বছরের সাজা হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। এরপর প্রতি ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। সবশেষ ১২ সেপ্টেম্বর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।