আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এর আগে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ বছরের জন্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশের পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমএফ।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে ওই পূর্বাভাস সংশোধন করে ৬ শতাংশ হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

কয়েকদিন আগে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বিদেশি চ্যালেঞ্জের মধ্যে চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনে বিশ্বব্যাংক। তার এক সপ্তাহ পর সংশোধিত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস জানাল আইএমএফ।

তবে, বহুপাক্ষিক এই ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালে বৈশ্বিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রেখেছে।

গত সেপ্টেম্বরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জানিয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকার সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকারের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে উন্নয়ন সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসের বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।

প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়ার পাশাপাশি আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ৭ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০২৮ সালে তা ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নামতে পারে।

এ ছাড়া চলতি হিসাবে ভারসাম্যে ঘাটতি অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। তারা বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ঘাটতি জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।

আইএমএফের প্রতিবেদনে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিজনিত সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে বিশ্ব অর্থনীতি। যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানি বাজার বিঘ্নিত হয়েছে; সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে নীতি সুদহার অভূতপূর্ব হারে বাড়ানো হয়েছে—এসব কারণে বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি।

বাংলাদেশ নিয়ে আইএমএফের প্রবৃদ্ধির নতুন হিসাব প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. আর এম দেবনাথ বলেন, ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এটিও কম নয়। মোটামোটি এই সময়ে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে এমনটা বলা যাবে না। তবে মূল্যস্ফীতির বিষয়ে যে বিষয়টি বলা হয়েছে এটি উদ্বেগের। কারণ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মানুষের আয়ের সমন্বয় করা হয়নি। আবার বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি যখন কম হবে তখন বাংলাদেশ সেই সুযোগ নিতে পারবে না। এটা এখানে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। তাতে আখেরে ক্ষতি হবে অর্থনীতির।