দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি জাতির জন্য সংকটময় বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। দেশে গণতন্ত্র ফেরানোকে মূল লক্ষ্য উলেখ করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ের কথাও জানান দলটির সিনিয়র নেতারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, সব রাজনৈতিক দলগুলো এক সঙ্গে হয়েছি। সরকার পদত্যাগের এক দফার মধ্যে এসেছি। স্বচ্ছ, অবাধ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার চাই। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যেভাবে ঐক্য হয়েছি, জনগনকে সঙ্গে নিয়ে সেই দাবি অর্জন করতে পারব। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের মানুষ সবসময় প্রমাণ করেছে, ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন জয়ী হয়েছে। এবারও বিশ্বাস করি, দেশের জনগণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।
বিএনপির উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’ শীর্ষক এ সেমিনার হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, অষ্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সরকারের দমননীতির চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে সময়টা অতিক্রম করছি তা জাতির জন্য সবচেয়ে একটা সংকটময় সময়। এ মুহুর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া, যিনি সবচেয়ে বেশি গণতন্ত্রের পক্ষে সারাটা জীবন দিয়েছেন, আজকে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায়। এই শাসকগোষ্ঠির চরম প্রতিহিংসার কারণে বিনা চিকিৎসায় আজ মুমুর্ষ অবস্থায় রয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় রাখা হয়েছে। আমাদের প্রায় ৭শ তরুণ-যুবক, তার মধ্যে তিনজন সংসদ সদস্য ছিলেন তাদেরকে গুম করা হয়েছে। প্রায় ৪৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা চলছে। অনেককেই নির্বাচনের আগে সাজা দেওয়া হচ্ছে, যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। সরকার এই অবস্থা তৈরি করেছে। এর একটাই মাত্র কারণ যেন বিরোধী দল নির্বাচনে না যেতে পারে, একমাত্র আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় যাবে।
স্থিতিশীল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চাই উল্লেখ করে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দানের বিষয়টিই প্রতিফলিত হয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক দেশ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে কাতারবদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করার পাশাপাশি লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম ও রাজনীতি নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশির স্বাধীনতা, সমতা, সমৃদ্ধির ক্ষমতায়নের জন্য দেশীয় উদ্যোগ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারবদ্ধ। বিএনপি জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করতে নিবেদিত।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক বিশ্বে গৃহিত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বৈশ্বিক একটি অবাধ, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের লক্ষ্যে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থাপত্যকে নতুন করে ঢেলে সাজাবে বলে আশা করা যায়। সংযোগের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বঙ্গোপসাগরের শীর্ষে বাংলাদেশের অবস্থান পশ্চিম ও পূর্ব গোলার্ধের পাশাপাশি ভারত মহাসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।নিরাপত্তা সহযোগিতা, নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সম্প্রীতি, নিরাপদ নৌ চলাচল, টেকসই অর্থনীতি, মুক্ত-বানিজ্য, জলবায়ু, স্বাস্থ্য, মহামারীর মতো হুমকিসমূহের মোকাবিলার পাশাপাশি একটি অবাধ, মুক্ত, উদার, গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল গ্রহণ করেছি।’
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, তাবিথ আউয়াল, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহেদুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির নজরুল ইসলাম খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মনিরুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, তাজমেরী এসএ ইসলাম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, আবদুল কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আসাদুজ্জামান আসাদ, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, জহির উদ্দিন স্বপন, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার রাশেদ প্রধান, খন্দকার লুৎফুর রহমান প্রমুখ।