জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী হুমায়রা হিমুর মৃত্যুর ঘটনায় মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি ওরফে উরফি জিয়া নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাকে গ্রেফতারের পর হিমুর মৃত্যুর নেপথ্যের কারণ বেরিয়ে এসেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিয়া র্যাবকে জানিয়েছেন, তার সামনেই হিমু গলায় ফাঁস নিয়েছেন।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব জানায়, অভিনেত্রী হিমু অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। গত ৪ মাসে প্রায় ২১ লাখ টাকাসহ ২-৩ বছরে অন্তত ৪০ লাখ টাকা খুইয়েছেন তিনি। এর আগেও প্রেমিক জিয়াকে ৩/৪ বার আত্মহত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। কারণ হিমু এতে আসক্ত হয়ে অনেক টাকা খুইয়েছেন। সবশেষ ঘটনার দিন একই বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে হিমু বাসার বাইরে থেকে মই এনে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে জিয়া হিমুর বাসার মেকাপম্যান ও দারোয়ানকে নিয়ে তাকে উদ্ধার করে উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণা করলে অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি নিহতের গাড়ি এবং দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে দ্রুত বংশাল এলাকায় পালিয়ে যান। র্যাব-১ তাকে সেখান থেকে গ্রেফতার করে।
এর আগে সকালে জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি একজন টেক্সটাইল কেমিক্যাল ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকার সুত্রাপুর এলাকার মোহাম্মদ ইকবালের ছেলে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে হিমুর মৃত্যুর পর উত্তরা পশ্চিম থানায় তার খালা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, জিয়া র্যাবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন বিকেলে হিমুর উত্তরার বাসায় যান তিনি। পরে অনলাইন জুয়ার বিষয় নিয়ে হিমু ও তার মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় হিমু বাসায় ভাঙচুর চালান। এক পর্যায়ে রুমের বাইরে থেকে একটি মই এনে সিলিং ফ্যান লাগানোর লোহার সাথে পূর্ব থেকে বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
জিয়ার দাবি, হিমু এর আগেও ৩/৪ বার আত্মহত্যা করবেন বলে তাকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আর আত্মহত্যা করেননি। এবারও বিষয়টি গুরুত্ব তিনি দেননি। তবে সত্যি সত্যিই হিমু গলায় ফাঁস দিলে তিনি হিমুকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এসময় তিনি পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন। পরে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামান। এরপর বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় তিনি হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিয়া আরও জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে হুমায়রা হিমুর খালাতো বোনকে জিয়া বিয়ে করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যাজনিত কারণে তাদের বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের সুবাদে তার সাথে হিমুর পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। জিয়া অন্যত্র বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে তিনি বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। চার মাস আগে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত হিমুর বাসায় যাতায়াত করতেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাকবিতণ্ডা হতো।
জিয়া দাবি করেন, দুই-তিন বছর ধরে হিমু Bigo Live Apps-এ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন। সেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেছেন। এসব বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় বাকবিতণ্ডা ও মনোমালিন্য হতো।