দেশের দক্ষিণ উপকূলে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ আঘাত হানার ১৬ বছর হলো আজ। উপকূলের অন্যান্য জেলার মতো বাগেরহাটের শরণখোলায় এদিন তাণ্ডব চালায় ‘সিডর’। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বেড়িবাঁধ। প্রাণ হারায় জেলার সহস্রাধিক মানুষ। সেদিনের ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি এই জনপদের মানুষ। নির্মাণাধীন বাঁধের কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় নতুন করে আতংকে আছে স্থানীয়রা।
২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে বাগেরহাটসহ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে।সেদিন মহাবিপদ সংকেতের কথা শুনে আতঙ্কিত বরগুনা উপকূলের মানুষ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। সচেতন মানুষজন যেতে শুরু করলেন আশ্রয়কেন্দ্রে। বেশির ভাগ মানুষই রয়ে গেলেন বাড়িতে। তাদের ধারণা ছিল, কত ঝড়ই আইল গেল, এবারেও তাদের কিছু হবে না। সিডর আঘাত হানতে শুরু করেছে উপকূলীয় এলাকায়। মানুষের ঘর যেন এখনই উড়িয়ে নিয়ে যাবে। তার সঙ্গে যুক্ত হলো পানি প্রবাহ।
স্থানীয় মানুষের স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে, ধ্বংসলীলার সেই চিত্র। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গোপসাগরের সব জল জম দূতের মতো এসে মানুষগুলোকে নাকানি-চুবানি দিয়ে কেড়ে নিতে শুরু করল। মাত্র ১০ মিনিটের জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের কয়েক হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পুরো এলাকা হয়ে গেল লণ্ডভণ্ড। সকালে মনে হলো কেয়ামত হয়ে গেছে। চারিদিকে ধ্বংসলীলা। লাশের পর লাশ পাওয়া যাচ্ছে। কবর দেওয়ার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এক একটি কবরে ২ থেকে ৩ জনের লাশ ফেলে মাটি চাপা দেয়া হলো। সিডরের এত বছর পরেও নিহতের সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি।
সিডরের আঘাতে কেবল বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলাতেই প্রাণ হারায় ১১শ’র বেশি মানুষ। ২০ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত হয় হাজার-হাজার ঘরবাড়ি, মারা যায় লক্ষাধিক গবাদি পশু। বিরান ভূমিতে পরিনত হয় শরণখোলা। সিডরের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে সে সময়ে অন্তত ২৫ কিলোমিটার বাঁধ বিধ্বস্থ হয়।
২০১৬ সালের ২৬শে জানুয়ারি থেকে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে শরণখোলা উপজেলায় ৬৩ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তবে নির্মাণকাজ শেষ না হলেও সম্প্রতি বাধের কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিতে পড়েছে বাঁধের ৫ কিলোমিটার এলাকা। এতে আতংকে আছে এলাকাবাসী।
পরিস্থিতি থেকে পরিত্রান পেতে নদী শাসন করে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের।
বর্তমানে চীনের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাঁধ নির্মাণের কাজ করছে। ২০১৯ সালের ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো হয়নি।












