পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, আমেরিকা স্যাংশনের দেশ। ওরা দিতে পারে। ওরা বড় লোক। আমরা তো একদিনে আমেরিকা হতে পারব না। আমাদের ইচ্ছে আছে ওনাদের মতো ভালো হওয়ার, কিন্তু আমরা একদিনে হতে পারব না। ওনারা (যুক্তরাষ্ট্র) যাদের টাকাটুকা দিয়ে রাখে, তারা মনে করে একদিনে বাংলাদেশ আমেরিকা হয়ে যাবে। হঠাৎ করে ওনারা বড় লোকের কথা বললে তাজ্জবের বিষয় মনে হয়।’

রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে স্কটল্যান্ডের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের মান উন্নয়ন নিয়ে সম্প্রতি একটি নতুন স্মারকপত্র স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই স্মারক জারির ঘোষণা দেয়ার সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও চলে আসে।

নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের নানা বক্তব্যের প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মোমেন বলেন, ‘যেসব বিদেশি নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা বলেন, তারা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করুক, এটা হচ্ছে দ্য অ্যাম্বাসেডর পার্টি বা অন্য কিছু। আর একটা অঙ্গীকার করুক, যারা তাদের ভোট দেবেন, তাদের নিজেদের দেশের নাগরিক করে নিয়ে যাবেন। দেখবেন, অনেকেই তাদের ভোট দেবেন। তাদের সেই নিশ্চয়তা দেওয়া উচিত, যারা তাদের ভোট দেবে, তাদের নিজ দেশের নাগরিক করে নেবেন।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা আমার বলা উচিত না, আপনি যদি রাজনীতিবিদ হোন, তাহলে এক দল না এক দল আপনার সম্পর্কে বক্তব্য দেবে। আমরা যারা পাবলিক লাইফে, আমাদের সম্পর্কে পাবলিক বক্তব্য দেবে। আর যদি আপনি রাজনীতি থেকে সরে থাকেন, তাহলে কেউ আপনাকে এসব নিয়ে তিরস্কার করবে না। আর কে কী কোথায় বলল, এভিডেন্স তো আমাদের দেন নাই। আমাদের আগে এভিডেন্স প্রয়োজন।’

মোমেন বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা মুক্তচিন্তায় বিশ্বাস করি, ফ্রিডম অব স্পিচ, ফ্রিডম অব মিডিয়ায় বিশ্বাস করি। কারো মুখ তো আঠা দিয়ে বন্ধ করে দিতে পারি না। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি গর্হিত কাজ করে, তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব, অ্যাকশন নিচ্ছিও।’

যারা শ্রমিকদের অধিকার হরণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘১৯ শতকের শুরুতে আমেরিকার শ্রমিকরা ১৮ ঘণ্টার মতো কাজ করত ২০ সেন্ট মজুরিতে। আমেরিকার উন্নয়নের কথা আমরা জানি। কী রকম অত্যাচারিত হয়েছে সেখানকার শ্রমিকরা। কিন্তু আমাদের এখানের শ্রমিকরা আমেরিকার তুলনায় অনেক ভালো। আমেরিকায় জনপ্রতি আয় প্রায় ৬৫ হাজার ডলার। আর আমাদের দেশে দুই হাজার ৮০০ ডলার। সেই তুলনায় আমাদের দেশের শ্রমিকরা অনেক ভালো।’

স্কটল্যান্ড প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘আমি স্কটল্যান্ডের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বলেছি, আপনারা ভালো দিনে এসেছেন। আমরা মনোনয়নপত্র দাখিল করব। দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা করতে চাই। সে কারণে প্রাতিষ্ঠানিক যা যা করার আছে আমরা সবকিছু করব। আমরা বায়োমেট্রিক ব্যালট, আইডি, স্বচ্ছ ব্যালট বক্স ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছি। অবাধ নির্বাচনের জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। গণতন্ত্রে আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস আছে। আমরা বিশ্বাস করি সরকার পরিবর্তনের হাতিয়ার হচ্ছে নির্বাচন। আমরা গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে চাই, কেউ গণতন্ত্র নষ্ট করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা শক্ত পদক্ষেপ নেব।’

ড. বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আছে। যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়নি, তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে বিভিন্ন অজুহাত তৈরি করছে। গত ২৮ অক্টোবর আমরা তার একটা চিত্র দেখেছি। তারা শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রার নামে যে কাণ্ড করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।’

স্কটল্যান্ডের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে তিনজন সংসদ সদস্য, একজন কনজারভেটিভ, এককজন লেবার পার্টি ও একজন গ্রিন পার্টির সদস্য ছিলেন।