দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের আসন বিন্যাস ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনে নিজ বাসায় ১৪ দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের সাথে সাক্ষাত শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

আমু বলেন, নির্বাচনে ১৪ দল জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নেবে। এনিয়ে বুধবার জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনা হবে। এর আগে জোটের শীর্ষ নেতারা জানান, নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি সবার জন্য সম্মানজনক হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।

মঙ্গলবার বৈঠক শেষে জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৪ দল আদর্শিক জোট। আসন বিন্যাসের ওপর জোটের সম্পর্ক নির্ভর করে না। অন্যান্য দলের মতো ১৪ দল ভাগাভাগির জোট নয়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আছে। ১৭ তারিখের আগে জোটকে আসন ছাড়ের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘কালকের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আজকের বৈঠক। অল্প কয়দিনের মধ্যে জানা যাবে জোটের প্রার্থী কারা হবেন। জোটের পক্ষ থেকে একটা তালিকা দেয়া হয়েছে, আগের চেয়ে কিছু আসন বেশি চেয়েছে ১৪ দল।

মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ভিত্তিতে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। মূলত ওই বছরের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালিয়ে অনেক নেতাকর্মীকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে ২৩ দফা ঘোষণা দিয়ে ১৪ দলীয় জোটের যাত্রা শুরু হয়।

২০০৮ সাল থেকে গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে ভোটে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনেও জোটসঙ্গীদের ১৩ আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।

জোটের অন্যান্য দলের সিংহভাগ প্রার্থীই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। এবারের ভোটেও নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে ভোট করার কথা জানিয়ে ১৪ দলের ছয়টি দল নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর মাত্র দুটি আসন ছেড়ে ২৯৮ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই দুই আসন হলো জাসদের হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ ও জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমানের নারায়ণগঞ্জ-৫।

মঙ্গলবার আমুর বাসায় বৈঠক শেষে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘জোটের মর্যাদা সম্মান রক্ষা করে আসন যেনো চূড়ান্ত হয় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ১৪ দল প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে শরিক দলগুলোর বৈঠক নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য অটুট রয়েছে। আজকালের মধ্যেই আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ১৪ দলে ঐক্যের কোনো ঘাটতি নেই। সিট শেয়ারিংয়ের বিষয় আজকালের মধ্যে নির্ধারিত হয়ে যাবে। দু-একদিনের মধ্যেই নির্বাচনী আসন নিয়ে শরিক দলগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে আওয়ামী লীগ।

‘তাদের চাওয়া এবং সেই চাওয়া পূরণের বাস্তবতা বুঝেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷ জোটসঙ্গীরা দাবি করতেই পারেন, চাইতেই পারেন৷ তবে অ্যাডজাস্টমেন্টটা তো করতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেয়ার পরে যদি তারা না জেতে, সেগুলো বিবেচনায় নেয়া হবে। নির্বাচনে জিততে হবে, এটাই মূল বিষয়।

২০০৮ সাল থেকেই ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে আসছে। তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুটিতে জোটের শরিক হিসেবে ছিল জাতীয় পার্টিও। তবে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের পর জাতীয় পার্টি জোটে ছিল না। এবারও বিএনপি ভোটে নেই। জোটে নেই জাতীয় পর্টি।

২০১৪ সালে জোট না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে, এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এসব আসনেই জয় পায় দলটি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের জোট করার পর তাদেরকে দেওয়া হয় ২৬টি আসন, এর মধ্যে তারা জয় পায় ২৩টিতে। এবার অবশ্য দলটিকে কোথাও ছাড় দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি।

গত নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ১৩টি আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ১১জন প্রার্থী ভোট করে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায়, জাতীয় পার্টি (জেপি) দুইজন প্রার্থী তাদের দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল নিয়ে ভোটে অংশ নেয়।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫টি আসন পায় ওয়ার্কার্স পার্টি। আসনগুলো ছিল ঢাকা-৮, রাজশাহী-২, বরিশাল-৩, ঠাকুরগাঁও-৩ ও সাতক্ষীরা-১। এর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী ও সাতক্ষীরায় জয় পায় দলটি।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ পায় তিনটি আসন। এগুলো হলো কুষ্টিয়া-২, ফেনী-১ ও বগুড়া-৪। দলটির দুই নেতা জয় পায় কুষ্টিয়া ও ফেনীতে।

তরীকত ফেডারেশন পায় লক্ষ্মীপুর-১ ও চট্টগ্রাম-২ আসন। দলটির প্রার্থী জয় পান চট্টগ্রামে।

জাতীয় পার্টি (জেপি) পায় কুড়িগ্রাম-৪ ও পিরোজপুর-২ আসন। এর মধ্যে জয় পায় পিরোজপুরে।

বাংলাদেশ জাসদ পায় চট্টগ্রাম-৮ আসন। সেই আসনে বিজয়ী প্রার্থী মইন উদ্দীন খান বাদল ২০২০ সালে মারা গেলে আওয়ামী লীগের নেতা মোসলেম উদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

তারও মৃত্যু হয় ২০২৩ সালে। গত ২৭ এপ্রিল আবার উপনির্বাচন হলে জয় পান আওয়ামী লীগের নোমান আল মাহমুদ।

এই আসনগুলোর বাইরে আরও অনেকগুলোতে এসব দলের একক প্রার্থী ছিল।

এবার দুটি আসন ছেড়ে ২৯৮ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে তারা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাবে, এ কথা নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে জানিয়েছে। একইভাবে ১৪ দলের শরিক দলগুলোও আলাদাভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে।