আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সংবাদদাতা মোয়ামেন আল শরাফি। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি হামলায় হারিয়েছেন পরিবারের ২২ সদস্যকে।

ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক ও তার পরিবারের সদস্যরা উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলো। স্থানীয় সময় বুধবার (৬ই ডিসেম্বর) সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে প্রাণ হারান তারা। বৃহস্পতিবার (৭ই ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তার পরিবারের নিহত ২২ সদস্যদের মধ্যে আল শরাফির বাবা মাহমুদ এবং মা আমিনা, তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী, বোন এবং তার স্বামীর পাশাপাশি ভাগ্নে ও ভাগ্নিও রয়েছেন।

আল শরাফি আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, হামলার সময় একটি বিস্ফোরক ব্যারেল শরণার্থী শিবিরটিতে আঘাত করে এবং এর ফলে মাটিতে গভীর গর্ত তৈরি হয়। সিভিল ডিফেন্স ক্রুদেও কেউ নিহতদের মৃতদেহের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি।

প্রিয়জনদের বিদায় জানানোর এবং তাদের যথাযথভাবে কবর দেওয়ারও সুযোগ নেই। হামলার পর তোলা একটি ভিডিওতে আল শরাফির এক আত্মীয়কে বোমা বিস্ফোরিত ধ্বংসাবশেষের কাছে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা গেছে।

এদিকে বোমা হামলায় নিহত হওয়ার আগে তার মা আমিনা তাকে যে শেষ ভয়েস ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন তা প্রকাশ করেছেন আল শরাফি। ওই ভয়েস নোটে শোনা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম। শুভ সকাল, মমিন। কেমন আছো? আশা করি, তুমি ভালো আছো। তোমার স্ত্রী-সন্তান কেমন আছে? তোমার শারীরিক অবস্থা কি? নিজের যতœ নিও, বাবা।’ ‘আল্লাহ তোমাকে এই যুদ্ধ থেকে রক্ষা করুক। ভালোভাবে নিজের যতœ নিও, আমি সত্যিই তোমাকে মিস করি, আমি প্রতিদিন তোমার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক।’

এক বিবৃতিতে আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক ইসরাইলি এই হামলার নিন্দা করে বলেছে, ‘এই অপরাধের জন্য দায়ী সকলকে জবাবদিহি করার জন্য সমস্ত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে আল জাজিরা।’ ‘আল জাজিরা অবিলম্বে এই গণহত্যা বন্ধ করতে এবং শহীদদের পরিবার ও নিরাপরাধ হতাহতদের দুর্ভোগের জন্য দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত ৭ই অক্টোবর হামাসের আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল ফিলিস্তিনের গাজায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি হামলা থেকে রক্ষা পায়নি হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন। এর আগেও বহু সাংবাদিক ও তাদের পরিবার ইসরাইলি হামলায় গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন। এক সপ্তাহব্যাপী মানবিক বিরতির পর গত শুক্রবার থেকে গাজা উপত্যকায় আবার বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বর্বর ইসরাইলি বাহিনী।