মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘাত থেকে প্রাণে বাঁচতে দেশটির সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ (বিজিপি) বিভিন্ন সংস্থার ৩২৯ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। নানা আলোচনা শেষে তাদেরকে সমুদ্রপথে ফেরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
মানবিক দিক বিবেচনায় আপাতত আশ্রয় দেয়া হলেও শিগগিরই তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। কিন্তু তাদেরকে ফেরত পাঠাতে ঠিক কতদিন লাগতে পারে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ফেরত পাঠাতে সরকার ইতোমধ্যেই মিয়ানমারের সাথে সাথে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তবে সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করে তাদেরকে ফেরত পাঠাতে বেশ কিছু দিন সময় লেগে যেতে পারে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সূত্রে জানতে পেরেছে বিবিসি বাংলা।
গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে দেশটির সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির ব্যাপক গোলাগুলি ও সংঘর্ষ চলছে।
বিদ্রোহীদের তীব্র হামলার মুখে গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে দফায় দফায় প্রবেশ করতে দেখা যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের।
গত তিন দিনে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আড়াই শ’ জনের বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যই রয়েছেন দুই শ’ জনের বেশি।
এছাড়া সেনা সদস্য, শুল্ক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরের সরকারি কর্মকর্তারাও পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
তাদেরকে এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সরকার।
ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া কী?
একটি দেশের নাগরিক বিনা অনুমতিতে অন্য আরেকটি দেশের সীমানায় ঢুকে পড়লে সেটিকে ‘অনুপ্রবেশ’ হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে অনেক সময় আটক করে তাদেরকে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে দেখা যায়।
কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতি বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রাণে বাঁচতে একটি দেশের নাগরিক অন্য দেশের সরকারের কাছে সাময়িকভাবে আশ্রয় চাইলে, সেটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়।
‘মানবিক দিক বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে তাকে আশ্রয় দেয়া হয়। তবে নিরাপদ উপায়ে কিভাবে তাকে আবার দ্রুত ফেরত পাঠানো যায়, সেটিও একইসাথে বিবেচনা করা হয়’, বিবিসি বাংলাকে বলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন।
এক্ষেত্রে আশ্রয়দাতা দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আশ্রয় গ্রহীতার দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনা জানানো হয়।
এরপর দু’দেশের সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই ফেরত পাঠানো হয়।
এর আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
পরবর্তীতে তাদের ফেরত পাঠাতে দু’দেশের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু নিজ দেশে ফিরতে নিরাপদবোধ না করায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাউকেই গত ছয় বছরে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়নি।
‘প্রাণে বাঁচতেই যেহেতু তারা আশ্রয় চেয়েছেন, সেহেতু ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রেও আশ্রয়গ্রহীতার নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেয়া হয়’, বিবিসি বাংলাকে বলেন হোসেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আশ্রয় নিলেও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের আশ্রয় নেয়ার এমন ঘটনা বাংলাদেশে আগে কখনো দেখা যায়নি।
‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম। কাজেই সরকার কিভাবে এবং কত দ্রুততার সাথে নিরাপদে তাদেরকে ফেরত পাঠাতে পারে, সেটিই এখন দেখার বিষয়’, বিবিসি বাংলাকে বলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন।
এক্ষেত্রে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই কেবল পারস্পরিক বুঝাপড়ার ভিত্তিতে আশ্রয়গ্রহীতাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায় বলেও জানিয়েছেন তিনি।